বেলা ১টায় পরীক্ষা শেষ করে হৃদয় যখন বাড়ি ফিরেছে তখন বাবাকে শেষ বিদায় জানাতে আত্মীয়-স্বজনরা উপস্থিত হয়েছে; চলছে জানাজার প্রস্তুতি।
Published : 27 Feb 2024, 02:19 PM
বাড়িতে যখন বাবার মরদেহ নিয়ে আহাজারি চলছিল তখন নাইম হোসেন হৃদয় মোল্যার মনে ঝড় উঠেছিল এখন কেমন করে পার হবে এ বন্ধুর পথ। উপার্জনক্ষম বাবাকে হারানোর শোক সামলেই এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল সে।
মঙ্গলবার সকালে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের খাঞ্জাপুর গ্রামে এ দৃশ্য দেখে যখন সবাই চোখের জল ফেলছিল, তখন হৃদয়ের চোয়াল ছিল শক্ত। মনে অঙ্গীকার ছিল বাবার স্বপ্ন পূরণের।
খাঞ্জাপুর গ্রামের মনিরুজ্জামান মোল্যার ছেলে হৃদয় সকাল ১০টায় সরকারি মুকসুদপুর কলেজ কেন্দ্রে ধর্ম পরীক্ষা দেয়। সোমবার রাতে বাড়িতেই তার বাবা মারা যান। মঙ্গলবার দুপুরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
বেলা ১টায় পরীক্ষা শেষ করে হৃদয় যখন বাড়ি ফিরেছে তখন বাবাকে শেষ বিদায় জানাতে আত্মীয়-স্বজনরা উপস্থিত হয়েছে; চলছে জানাজার প্রস্তুতি। বাড়িতে পৌঁছে বাবার মরদেহের কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে হৃদয়।
হৃদয় বলেন, “আমার বাবার স্বপ্ন ছিলো, আমি বড় হয়ে বিসিএস ক্যাডার হবো। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন। বাবা আমার ভবিষ্যত দেখে যেতে পারলেন না।
“তাই আমি বাবার স্বপ্ন পূরণে সচেষ্ট থাকব। উপার্জনক্ষম বাবাকে হারিয়ে আমার এ পথ আরও কঠিন হয়ে গেলো।”
হৃদয়ের চাচা বাবুল মোল্যা বলেন, “আমার ভাই মনিরুজ্জামান সোমবার রাতে স্ট্রোক করে বাড়িতেই মারা যান।
ভাতিজার পরীক্ষা শেষে বাদ জোহর খাঞ্জাপুর গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।”
সরকারি মুকসুদপুর কলেজ কেন্দ্র সচিব অচিন্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, “শিক্ষার্থী নাইম হোসেন হৃদয়ের বাবা মারা গেছেন খবর পেয়ে আমরা তার আলাদাভাবে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু সে সবার সঙ্গে বসেই পরীক্ষা দেবে বলে আমাদের জানায়। পরে সে স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষা দিয়েছে৷”
পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মুকসুদপুর থানার এএসআই শফিকুল ইসলাম বলেন, “বাড়িতে বাবার লাশ রেখেও হৃদয় ভালভাবে পরীক্ষা দিয়েছে। আমি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি।”