“মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে মিঞা আরেফী কখনও কথা বলেননি।”
Published : 07 Nov 2023, 07:21 PM
সাবেক সেনা কর্মকর্তা চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীর ‘শিখিয়ে দেওয়া কথাই’ জো বাইডেনের ‘উপদেষ্টা’ পরিচয় দেওয়া মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরেফী সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।
মঙ্গলবার গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে মিঞা আরেফীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন ডিবি প্রধান।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুয়ায়ী মঙ্গলবার মিঞা আরেফিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ডিআইজি হারুন-অর-রশিদ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন যুগ্ম কশিমনার খন্দকার নুরুন্নবী, উপ-কমিশনার মো. আক্রামুল হোসেন ও সহকারী কমিশনার মো. আজহারুল ইসলাম।
তারা সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কারাগারে আসেন। পরে পৌনে ১২টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত আরেফীকে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তারা।
কারা কর্মকর্তা আরও জানান, ৩১ অক্টোবর তাকে ঢাকা থেকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়।
কারাগার থেকে বেরিয়ে দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে ফটকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের হারুন বলেন, “চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী সাহেব যা শিখিয়ে দিয়েছেন আর বলতে বলেছেন ২৮ অক্টোবর বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে মিঞা আরেফী সেভাবেই বলেছেন। তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাকে আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসায় নিয়ে গিয়েছেন সারওয়ার্দী। হাসান সারওয়ার্দী ব্রিফিংয়ের সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
“হাসান সারওয়ার্দী সাহেব তাকে শিখিয়ে দিয়ে যে অন্যদিকে ধাবিত করেছেন এটা তিনি বুঝতে পারেননি। তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। ফাঁদে পড়ে তিনি যেভাবে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেভাবে কথা বলছেন। এখন তিনি অনুতপ্ত। এটা ঠিক করেননি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান বলেন, “২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ হাসপাতালে হামলা, পুলিশকে আঘাত করা, একজন পুলিশ সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা, সাংবাদিকদের আহত করা, সন্ধ্যায় সারওয়ার্দী সাহেবের মিঞা আরেফীকে নিয়ে বিএনপির পার্টি অফিসে ঢোকা- সবগুলো ঘটনা একটা আরেকটার সঙ্গে যুক্ত।
“সে কারণেই আমরা অনেক নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। হাসান সারওয়ার্দী সাহেবকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি অনেক কথা স্বীকার করেছেন। যে জায়গাগুলো উনি স্বীকার করছেন না, সেটা আমরা তার কাছ থেকে জেনে নিলাম। আমরা যদি মনে করি যে, ভবিষ্যতে আরও কোনো তথ্য জানার প্রয়োজন আছে তাহলে আমরা আবারও তাকে নেব অথবা এখান থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে মিঞা আরেফী কখনও কথা বলেননি। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে যখন জুম মিটিং হয়েছিল তখন জো বাইডেনের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। এরপর তার আর কারও সঙ্গে কথা হয়নি।
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষের পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক মিঞা আরেফী। তিনি নিজেকে জো বাইডেনের ‘উপদেষ্টা’ হিসেবে পরিচয় দেন।
একপর্যায়ে মিঞা আরেফীকে নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। তবে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস জানায়, মিঞা আরেফী মার্কিন সরকারের কেউ না।
পরে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন সেই মামলার আসামি।
২৯ অক্টোবর রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মিঞা আরেফীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
২ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরীর ভার্চুয়াল আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন মডেল থানার এসআই সুজানুর ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মিঞা আরেফীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অপরদিকে এই মামলায় ৩১ অক্টোবর সাভার থেকে হাসান সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। ১ নভেম্বর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আট দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন পলাতক থাকলেও পুলিশ তার ভাই ইশফাক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে এবং পরে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
আরও পড়ুন:
বাইডেনের ‘ভুয়া উপদেষ্টা’ আরেফী কারাগারে
বাইডেনের ‘ভুয়া উপদেষ্টা’ আরেফীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা
বাইডেনের ‘ভুয়া উপদেষ্টা’ আরেফী আটক
বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া সেই ব্যক্তি ইসরায়েলের এজেন্ট: তথ্যমন্ত্রী