বাগেরহাটে এক মণ্ডপে ১৫১ প্রতিমা, আছে রামায়ণ-মহাভারতের চরিত্র

জেলায় এবার মোট ৬৪২টি মন্দিরে দুর্গাপূজা হচ্ছে।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2022, 09:02 AM
Updated : 30 Sept 2022, 09:02 AM

বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের চুলকাঠি গ্রামের বণিকপাড়া সার্বজনীন পূজা মণ্ডপে দুই বছর বন্ধ থাকার পর আবার ১৫১ প্রতিমা দিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে; যেখানে রামায়ণ-মহাভারতের দেবদেবীরাও রয়েছে। 

জেলায় এত বেশি সংখ্যক প্রতিমা দিয়ে পূজা উদযাপনের নজির অবশ্য এটাই প্রথম নয়। সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের সিকদার বাড়িতে সবশেষ ৮৫১টি প্রতিমা দিয়েও দুর্গোৎসব হয়েছে। যদিও গত তিন বছর ধরে সেই পূজা বন্ধ রয়েছে।

বণিকপাড়া সার্বজনীন পূজা মণ্ডপের সভাপতি সুশান্ত দাশ বলেন, এক দশক ধরে এখানে ১৫১ প্রতিমা দিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হচ্ছে। রামায়ণ ও মহাভারতের দেবদেবীরাও সেখানে স্থান পেয়েছেন। করোনাভাইরাস জনিত মহামারীর কারণে গত দুই বছর দুর্গা দেবীর সাধারণ প্রতিমা গড়েই পূজা উদযাপন হয়েছে। এবার যেহেতু মহামারীর প্রকোপ কম তাই আবার ১৫১ প্রতিমা দিয়ে পূজার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

পূজা মণ্ডপ কমিটির সভাপতিও আশা, অভিনবত্বের কারণে এই মণ্ডপে আশপাশের জেলা-উপজেলার প্রচুর দর্শনার্থী এখানে ভীড় করবেন।   

বণিকপাড়া সার্বজনীন পূজা মণ্ডপের প্রতিমা শিল্পী গণেশ সরকার বলেন, “১৫১টি প্রতিমার মাধ্যমে আমরা রামায়ণ ও মহাভারতের চার যুগের দেবদেবীর নানা কাহিনী ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। জেলার সব থেকে বড় এই আয়োজন দেখতে দর্শনার্থীরা ভীড় করবেন বলেই সবাই আশা করছি।”

বাগেরহাটের নয় উপজেলা ও তিন পৌরসভায় এ বছর ৬৪২টি মণ্ডপে শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শনিবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দেবীর বোধন হবে। আগামী বুধবার বিজয়া দশমীর মাধ্যমে শেষ হবে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে সব এই উৎসব।

শুক্রবার ঘুরে দেখা গেছে, মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিমায় রংয়ের আঁচড় দিতে ব্যস্ত শিল্পীরা। সঙ্গে চলছে মণ্ডপে আলোক ও সাজসজ্জার কাজ। 

দুর্গোৎসবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা। অপরদিকে প্রতিটি মণ্ডপ ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। জেলার বেশকিছু পূজা মণ্ডপে এব ছর সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের সিকদার বাড়িতে এবার সাধারণ প্রতিমা দিয়েই দুর্গা পূজা হচ্ছে। এটি জেলার সবচেয়ে বড় পূজা ছিল। এখানে ১০ বছর আগে ১৫১টি প্রতিমা দিয়ে পূজা শুরু হয়। পরে প্রতি বছরই প্রতিমারা সংখ্যা বাড়ানো হয়। এভাবে সাত বছরের মাথায় মন্দিরে ৮৫১টি প্রতিমা বসিয়ে পূজা হয়।

সিকদার বাড়ির পূজার আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বড় পূজা হওয়ার কারণে এখানে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসতেন। ২০১৯ সালে করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ প্রতিমা দিয়ে পূজা করা হয়। তার ধারাবাহিকতায় এ বছরও সাধারণ প্রতিমা দিয়েই পূজা হচ্ছে। এবারও করোনাভাইরাসের প্রকোপ থাকায় বড় পূজার আয়োজন করা হয়নি। মূলত মহামারীর কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিমা শিল্পী নির্মল পাল বলেন, এবার জেলার আটটি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ নিয়েছেন তিনি। ১০ জন কারিগর প্রায় এক মাস ধরে এসব প্রতিমা তৈরি করেছেন। এরই মধ্যে প্রায় সব মণ্ডপের প্রতিমার রংয়ের কাজ শেষ করেছেন। এখন অপেক্ষা দেবীর বোধনের।

বাগেরহাট শহরের দশানী সার্বজনীন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমন কুমার দাস বলেন, “মণ্ডপে প্রতিমার রংতুলির কাজ শেষ হয়েছে। মণ্ডপে সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জার কাজও শেষের পথে। এখানে পূজা দেখতে হাজারো দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে।

“আমরা এ বছর পুরো মণ্ডপ এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় রেখেছি। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো সুযোগ নেই। সবাইকে সম্প্রীতি বজায় রেখে উৎসব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।”

বাগেরহাট জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিলন ব্যানার্জী বলেন, বাগেরহাট জেলায় এ বছর ৬৪২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পূজা উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসন সম্প্রীতির জন্য সভা করেছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। দেশে বিগত বছরের মতো পূজায় কোথাও যেন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটতে পারে সেজন্য সরকার, প্রশাসন ও সর্বস্তরের মানুষের কাছে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।”

বাগেরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায় বলেন, “শারদীয় দুর্গোৎসব শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব নয়, এটি বাঙালির উৎসব। এ বছর এই উৎসবে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। আসন্ন দুর্গাপূজাকে ঘিরে বাগেরহাটে একটি গোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছি।”

আসন্ন পূজায় মণ্ডপগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানোর আহ্বান জানান এই জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক বলেন, “শারদীয় দুর্গোৎসব উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হবে। বাগেরহাটে এ বছর ৬৪২টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এই উৎসব যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হতে পারে সেজন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের নিয়মিত টহল থাকবে। দুর্গাপূজা বাঙালির যে কৃষ্টি-সংষ্কৃতি, বাঙালির যে বন্ধন- তা ঠিক রেখে পূজা হবে।”