বিজিবি যে ২৩ জনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে, তার মধ্যে তাকে পাওয়া গেছে।
Published : 10 Feb 2024, 08:09 PM
বান্দরবানের ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে স্বজনদের খোঁজে যেসব রোহিঙ্গা শুক্রবার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছিলেন, তাদের একজন নুরুস সালাম অবশেষে তার ভাগ্নের দেখা পেয়েছেন।
কক্সবাজার আদালত চত্বরে শনিবার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এদিন আদালতে যে ২৩ রোহিঙ্গাকে হাজির করা হয়, তার মধ্যে ভাগ্নে ইয়াসিন আরাফাতও আছে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ, যার শুনানি হবে রোববার।
উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন বলেন, “এই ২৩ জন রোহিঙ্গা সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী। ১২টি অস্ত্রসহ শুক্রবার তাদের পুলিশে সোপর্দ করে সীমান্ত রক্ষা বাহিনী-বিজিবি। এরা বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তালিকাভুক্ত বাসিন্দা।”
মিয়ানমারের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসা দেশটির সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিপির দুই শতাধিক সদস্যকে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। মিয়ানমার থেকে প্রবেশ করার সময় ধরা পড়া রোহিঙ্গাদেরও সেখানে রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন স্বজনরা।
শুক্রবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার স্কুলটির ছয় মাসের মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে ছিলেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১০ এর বাসিন্দা নুরুস সালাম। তার সঙ্গে ছিলেন বোন ও আরেক সন্তান।
নুরুস সালাম বলেছিলেন, তার ২০ বছরের ভাগ্নে ইয়াসির আরাফাত এই ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজিবি হেফাজতে ছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি এসে ‘দেখেও গেছেন’। কিন্তু শুক্রবার আর খোঁজ পাচ্ছিলেন না।
তবে পরদিন কক্সবাজার আদালত চত্বরে এসে প্রিজন ভ্যানে ভাগ্নের মুখ দেখতে পেয়েছেন নুরুস সালাম।
পুলিশ বলছে, বিজিবির সোপর্দ করা ২৩ জন কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের বিভিন্ন স্থান দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। তারা বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তালিকাভুক্ত বাসিন্দা। কিন্তু কী কারণে তারা মিয়ানমারে গিয়েছিল তা জানার চেষ্টা চলছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “গত মঙ্গলবার রহমতের বিল, আনজুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এরা বিজিবির কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছে।
“এর বাইরে আরও কিছু রোহিঙ্গাকে অস্ত্রসহ আটক করে পুলিশে দিয়েছে গ্রামবাসী। পুলিশ পরে এদের বিজিবি হেফাজতে দেয়।”
ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আলতাজ হোসেন বলেন, স্থানীয় মাধ্যমে তারা জেনেছেন, রহমতবিল সীমান্তের ওপারে মাদক ও অস্ত্র চোরাকারবারের অন্যতম হোতা রোহিঙ্গা ‘সন্ত্রাসী’ নবী হোসেনের লোকজনের আস্তানা ছিল। মঙ্গলবার ভোর ও রাতে তার দলের লোকেরা অস্ত্রসহ বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করে। এই দলের ৩০ থেকে ৩৫ জন অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাকে গ্রামবাসী আটক করে পুলিশ ও বিজিবির কাছে দিয়েছে।
উখিয়া থানা পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রয়েছে যারা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনের নেতৃত্বাধীন আরাকান রোহিঙ্গা আর্মির (এআরএ) সদস্য।
তবে নুরুস সালাম দাবি করেন, তার ভাগ্নে নবী হোসেনের ওই দলের সদস্য নয়। সংঘাতের মধ্যে ওপার থেকে বাংলাদেশে ঢোকার সময় গ্রামবাসী তাকে আটক করেছিল। ধরা পড়ার পর তাকে নবী হোসেনের সহযোগী 'বানানো' হয়েছে।
আরাফাত ‘জিরো লাইনে’ কাজ করতেন জানিয়ে সালাম বলেন, সেখানে সংঘাত শুরু হলে ভাগ্নেকে চলে আসতে হয়।
তবে তার ভাগ্নে ‘জিরো লাইনে’ কী কাজ করতেন তা পরিবারকে জানায়নি বলে ভাষ্য সালামের।
আদালত চত্বরে কথা হচ্ছিল রোহিঙ্গা নারী নুরজাহান বেগমের সঙ্গে। তার ছেলে সাইদুল ইসলামও আছে গ্রেপ্তার ২৩ জনের মধ্যে।
নুরজাহানের ভাষ্য, গ্রামের লোকজন তার ছেলেকে ধরে পুলিশে দেয়। পুলিশ তাকে কম্বল দিয়েছে, খেতে দিয়েছে। তবে ছেলে সাইদুল কী করেছে তা জানেন না নুরজাহান।
আদালতে হাজির করা ২৩ জনের মধ্যে থাকা ১৬ বছরের কায়সারের বাবা রোহিঙ্গা শামসুল ইসলামও এসেছিলেন আদালত চত্বরে। তিনিও বলেন, তার ছেলে কেন মিয়ানমারে গিয়েছিল তা জানেন না তিনি।
পুরনো খবর
মিয়ানমারে যুদ্ধ: অস্ত্রসহ আসা ক্যাম্পের ২৩ রোহিঙ্গার রিমান্ড আবেদন