কোডেক জানায়, গত চার বছরের মধ্যে এক দিনে এত কাছিম আগে ডিম দেয়নি।
Published : 27 Feb 2024, 08:39 PM
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এক দিনে এক হাজার ৮৯০টি ডিম পেড়ে সাগরে ফিরল ১৭টি কাছিম। যাদের ‘অলিভ রিডলি’ প্রজাতি বা জলপাই রঙা সামুদ্রিক কাছিম বলা হচ্ছে।
সোমবার রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের উখিয়া উপজেলার সোনারপাড়া ও টেকনাফের বিভিন্ন সৈকতের বালিয়াড়ি থেকে ডিমগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম জানান।
তিনি জানান, এ নিয়ে গত দুদিনে ২২টি কাছিম সৈকতে ডিম পেড়ে সাগরে ফিরেছে। ডিমগুলো ফোটানোর জন্য ইনস্টিটিউটের প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্রে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
ওই ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা জানান, টানা গত ১২ দিন কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ৭৬টি অলিভ রিডলি প্রজাতির স্ত্রী কাছিমের মৃতদেহ ভেসে আসে। আর গত জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ভেসে এসেছে ১০৩টি মৃত মা কাছিমের মৃতদেহ।
কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ সৈকত, সেন্টমার্টিন ও মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া উপকূল পর্যবেক্ষণ করে তারা এসব জানিয়েছেন।
এ ছাড়া ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য মতে, গত জানয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা মৃত কাছিমের সবকটির পেটে ডিম ছিল। প্রজনন মৌসুম হিসেবে অলিভ রিডলি প্রজাতির এসব স্ত্রী কাছিম সৈকতে ডিম পাড়তে এসে জেলেদের জালে, ট্রলারে ধাক্কা বা অন্য কোনোভাবে আঘাতে মারা পড়েছে বলে জানান, সমুদ্রবিজ্ঞানী ও সংশ্লিষ্টরা।
তবে দুদিনের মধ্যে সোমবার ইনানী সৈকতে ভেসে আসা একটি মৃত কাছিম ছাড়া মৃতের কোনো খবর নেই বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “একদিনে ১৭টি সুস্থ-সবল কাছিম সৈকতে ডিম পাড়ার বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দের। পূর্ণিমার সময় গভীর সাগর থেকে মা কাছিমগুলো নিরাপদে সৈকতে এসেছে।”
কক্সবাজার সৈকতে ৫৬৬ ডিম দিয়ে সাগরে ফিরেছে পাঁচটি কাছিম
এ জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, “উখিয়ার সোনারপাড়া সৈকতে সোমবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত তিনটি অলিভ রিডলি ২৯৩টি ডিম পেড়েছে।”
এ ছাড়া বেসরকারি সংস্থা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার- কোডেকের প্রকল্প পরিচালক শীতল কান্তি নাথ বলেন, “একই রাতে একই প্রজাতির ১৪টি কাছিম ডিম দিয়েছে এক হাজার ৫৯৭টি।”
কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে কাছিম সংরক্ষণে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট-ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে নেচার অ্যান্ড লাইফ প্রকল্পের অধীনে চার বছর ধরে কাজ করছে কোডেক।
কোডেক জানায়, গত চার বছরের মধ্যে একদিনে এত কাছিম আগে ডিম দেয়নি। সব কাছিমই অলিভ রিডলি প্রজাতির।
কোডেকের নেচার অ্যান্ড লাইফ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক অসীম কুমার বড়ুয়া বলেন, টেকনাফের বাহারছড়ার শীলখালীতে চারটি, সদরের হাবিরছড়ায় দুটি, উখিয়ার ছেপটখালীতে ছয়টি ও মাদারবুনিয়ায় দুটি স্ত্রী কাছিমত ১ হাজার ৫৯৭টি ডিম ছেড়েছে। ডিমগুলো ফোটানোর জন্য হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, উখিয়া উপজেলার মাদারবুনিয়া থেকে টেকনাফ উপজেলার ক্ষুরেরমুখ পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার সমুদ্র উপকূলে তাদের পাঁচটি হ্যাচারি রয়েছে। এসব হ্যাচারিতে ৫৮টি কাছিম থেকে ৬ হাজার ৬৩৭টি ডিম সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হয়।
সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষণ ও প্রজননে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তর ও বেসরকারি কয়েকটি সংস্থা কাজ করছে।
গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা জানান, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত অলিভ রিডলি ও হক্সবিল বা ভূত কাছিমের প্রজনন মৌসুম। তবে চলতি মৌসুমে কক্সবাজার উপকূলে কোথাও হক্সবিল কাছিম ডিম পাড়তে আসার তথ্য নেই।