শরীয়তপুরে ৩৭% প্রাথমিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই, সহকারী শিক্ষকেও সংকট

জেলায় এ ছাড়া সহকারী শিক্ষকের ৩৫১টি পদ শূন্য রয়েছে।

কে এম রায়হান কবীরশরীয়তপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2022, 10:07 AM
Updated : 6 Dec 2022, 10:07 AM

শরীয়তপুর জেলায় প্রায় ৩৭ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে; এ ছাড়া সহকারী শিক্ষকের সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিশুদের পড়াশোনা। 

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, জেলার ছয়টি উপজেলায় ৬৯৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৫৮টিতে প্রধান শিক্ষক নেই। এ ছাড়া সহকারী শিক্ষকের ৩৫১টি পদ শূন্য রয়েছে।

এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৪টি, জাজিরায় ৪৩টি, নড়িয়ায় ৫৮টি, গোসাইরহাটে ৪৮টি, ডামুড্যায় ২৫টি ও ভেদরগঞ্জে ৫০টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

এই সংকটের মধ্যেও অনেক শিক্ষক কোচিং-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। তারা বলেন, শিক্ষক সংকটে এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এরশাদ উদ্দিন আহাম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আমরা বার বার চিঠি দিয়েছি। জেলায় ৪৫০ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সহকারী শিক্ষক নিয়োগ চূড়ান্ত হলে অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট কেটে যাবে।“

সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের বালিয়াকান্দি আবদুল হামিদ সাকিদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই দীর্ঘদিন ধরে। এখানে সহকারী শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুজন। তারা কোনোরকমে ক্লাশ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিদ্যালয়ে প্রেষণে থাকা সহকারী শিক্ষক মইনুল ইসলাম বলেন, “দুই শিফটে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। একসঙ্গে তিনটি শ্রেণিতে পড়াতে হয়। দুজন শিক্ষক একসঙ্গে তিনটি শ্রেণিতে পড়াই। এক শ্রেণিতে কিছু সময় দিয়ে আবার অন্য শ্রেণিতে যাই।“

“এভাবেই একসঙ্গে দুটি শ্রেণির পাঠদান করাতে হিমসিম খাচ্ছি। তারপর দাপ্তরিক কাজ রয়েছে। উপজেলায় সভায় যেতে হয়। এভাবে স্কুল চালাতে গিয়ে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।”

সদরের শৌলপাড়া আব্দুল মান্নান খান ভাসানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একজন শিক্ষক কর্মরত আছেন। অপর একজন প্রেষণে রয়েছেন।

দুজন শিক্ষক বিদ্যালয়ের ১২৫ জন শিক্ষার্থীকে কোনোমতে পাঠ দিচ্ছেন। কোনো শিক্ষক অসুস্থ হলে কিংবা দাপ্তরিক কাজে জেলা-উপজেলায় গেলে পাঠদান কার্যক্রম পুরাপুরি বন্ধ রাখতে হয়।

বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুল হক খান বলেন, “উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়টির অবস্থান। এখানে কোনো শিক্ষক আসতে চান না। দীর্ঘদিন থেকে দুজন শিক্ষক পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছি। একজন ছুটিতে গেলে আরেকজনকে স্কুল চালাতে হয়। মাঝেমধ্যে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের দিয়ে পাঠ্যক্রম চালানো হয়।”

নড়িয়া উপজেলার ৩৬ নম্বর দিগম্বর পট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কোহিনুর বেগম বলেন, “আমাদের বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষকের পদ রয়েছে। কিন্তু এখানে প্রধান শিক্ষক নেই। চারজনেই স্কুল চালাই।”

জাজিরা উপজেলার আলতাফ হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারী শিক্ষক এমিন ইসলাম দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বলেন, পদ্মা নদীর চরে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। সেখানে কোনো শিক্ষক যেতে চান না। দুর্গম পদ্মা পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। বাধ্য হয়ে ওই চর থেকে দুজন স্বেচ্ছাসেবককে যুক্ত করা হয়েছে, তারা মাঝেমধ্যে পাঠদানে সহযোগিতা করেন।

জাজিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক সালাম মাদবর, আতাউর রহমানসহ কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, এমনিতেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কম। তার মধ্যে আবার কিছু শিক্ষক কোচিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তারা ঠিকমতো ক্লাশে যান না।