রূপপুরের বিদ্যুৎ মিলবে ২০২৫ সালের শুরুতে: মন্ত্রী

“উত্তরবঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনগণ এ প্রকল্প থেকে উপকৃত হবেন।”

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2024, 03:54 AM
Updated : 18 Feb 2024, 03:54 AM

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘গ্র্যাজুয়েশন’ বা প্রথম ইউনিটের ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করা হবে বৃহস্পতিবার। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

এ দুই রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে রুশ পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক এলেক্সি লিখাচেভ বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের কাছে ইউরেনিয়াম এসেম্বলির একটি মডেল হস্তান্তর করবেন।

বুধবার বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা পরিদর্শনের পর ইয়াফেস ওসমান বলেন, “এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তির অধিকারী হবে। ফলে আমরা পারমাণবিক জাতিতে পরিণত হব।”

রূপপুর কেন্দ্রের জন্য ইউরেনিয়াম আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরের এক দিন আগে  প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন একদিন দেখেছিলেন, তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেটি সম্পন্ন করতে যাচ্ছি। আর এই দিনে আমাদের পাশে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু রাশিয়া।” 

দেশের জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ২ শতাংশ অবদান রাখবে বলেও দাবি করেন ইয়াফেস ওসমান। ২০২৫ সালের শুরুতে রূপপুর থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গের পিছিয়ে পড়া জনগণ এ প্রকল্প থেকে উপকৃত হবেন।”

প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর বলেছেন, “প্রথম ইউনিটে কিছুদিন পর থেকে ডামি ফুয়েল দিয়ে পরিচালনা করে দেখা হবে, সব ঠিক আছে কি না। এরপর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যেমন কোল্ড টেস্ট, হট টেস্ট করা হবে।

“আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এসব চলতে থাকবে। তারপর বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী গাইডলাইন মেনে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য রূপপুর পুরোপুরি প্রস্তুতি থাকবে।”

শৌকত আকবর জানান, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এরই মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার ক্লাবের ৩৩তম সদস্য হতে যাচ্ছে। রূপপুরের দুটি ইউনিট থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, “রূপপুরের জন্য এই জ্বালানি আসছে রাশিয়া থেকে। রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত নভোসিবিরস্কের কারখানায় এসব ইউরেনিয়াম প্রস্তুত করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, রূপপুরে ৮০ বছর (লাইফ টাইম) এটি সরবরাহ করবে রাশিয়া। তবে প্রথম তিন বছর এই জ্বালানি বিনামূল্যে সরবরাহ করবে দেশটি।”

বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা অনুযায়ী পুরো মেয়াদেই রাশিয়া থেকে জ্বালানি আনতে হবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, “এজন্য অন্য আরেকটি চুক্তির মাধ্যমে ইউরেনিয়ামে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রথম তিন বছরে যে জ্বালানি আসবে, তার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

“প্রথম পর্যায়ে একটি ইউনিটে ১৬৩টি ইউরেনিয়াম বান্ডিল সংযোজন বা লোড করতে হবে। প্রথমবারে যে জ্বালানি লোড করা হবে তা দিয়ে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এক বছর। তবে তিন বছর পর থেকে ১৮ মাস পরপর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউরেনিয়াম লোড বা রিপ্লেস করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী আমাদের কাছে নির্মাণ কাজ ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহ করবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।”

রাশিয়ার ঋণ ও কারিগরি সহায়তায় নির্মাণ করা হচ্ছে দুই ইউনিটের এ কেন্দ্র। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। এর ৯০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে দেশটি।

[প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ০৪ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক]