“ পাঁচ দশক ধরে উদীচী বর্ষবরণ করে আসছে। এবারে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ৫০ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। ”
Published : 08 Apr 2024, 07:26 PM
পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠেছে যশোরের সংস্কৃতি অঙ্গন। বর্ণিল সাজ আর ঢাক-ঢোলের বাদ্যে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত হচ্ছে যশোরের সংগঠনগুলো। কর্মীরা এখন ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য লোকজ অনুষঙ্গ তৈরিতে।
স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীরা বলছেন, দেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রচলন প্রথম শুরু হয় যশোরে। ১৯৮৫ সালের ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের ভোরে জেলা শহরে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছিল; এরপর থেকে প্রতিবছর এদিন শোভাযাত্রা বের হচ্ছে।
যশোরের চারুপীঠ আর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট ১৯৮৫ সালে আয়োজন করেছিল শোভাযাত্রার। ঐতিহ্যের সেই চারুপীঠে এবারও শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলছে বেশ জোরেশোরে।
চারুপীঠ যশোরের সাধারণ সম্পাদক কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, “ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। তৈরি হচ্ছে বৃহৎ আকরের পেঁচা, ফড়িং, পরী। শেষ রঙ লাগছে মুকুট ও বিভিন্ন আকৃতির প্রতিকৃতিতে।”
পহেলা বৈশাখের সকালে যশোরের পৌর উদ্যানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন উদীচীর ৪৯ বছরের ঐতিহ্য। নববর্ষের সকালে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নারী পুরুষ ও শিশুরা নানা সাজে মিলিত হন এ অনুষ্ঠানে।
যশোর উদীচীর সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব বলেন, “ পাঁচ দশক ধরে উদীচী বর্ষবরণ করে আসছে। এবারে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ৫০ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। সকাল ৬টা ৩১ মিনিটে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভৈরব রাগ ‘প্রভাত বীনা তব বাজে’ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বৈশাখের আহ্বান পর্ব। এরপরই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানের পরিবেশনা থাকছে।
“আরও থাকছে শিশুতোষ পরিবেশনা, বাংলা হারানো দিনের গান, জীবনমুখী গান, লোকসংগীত, আধুনিক ও ময়মনসিংহ গীতিকা’র ‘মহুয়া সুন্দরী’ গীতিনৃত্যনাট্য। অনুষ্ঠানে ২৫০ জন শিল্পী এ সকল পরিবেশনায় অংশ নেবেন।”
এছাড়া নববর্ষ উপলক্ষ্যে উদীচীর শিল্পীরা দেয়াল চিত্রে সংগঠন প্রাঙ্গণ সাজিয়েছেন। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আগে উদীচী কার্যালয়ের প্রবেশদ্বারে নান্দনিক তোরণ তৈরি করা হবে বলে জানান সাজ্জাদুর রহমান খান।
শুধু উদীচী নয়, যশোরের সকল সাংস্কৃতিক সংঠন পহেলা বৈশাখের সকালে বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেই মহড়া চলছে এখন সংগঠনগুলোতে। বাংলা বর্ষবরণে যশোরের আর একটি ভিন্নতা হচ্ছে আমন্ত্রণপত্র তৈরিতে বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য ধারণ। নান্দনিক এই আয়োজনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাদের অনুষ্ঠান দেখার ও মিষ্টিমুখ করার নিমন্ত্রণ জানায় সকলকে।
এক উৎসব শেষ না হতেই আরেক উৎসব। উৎসবের এই রেশ ধরে রাখতে সকলের প্রচেষ্টা প্রয়োজন বলে মনে করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু।
যশোর জেলা প্রশাসন ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে স্থানীয় টাউন হল ময়দানের ১০ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
পুরনো সব জরা ঘুচিয়ে বর্ণিল এক উৎসবের মাধ্যমে বরণ করে নেবে ১৪৩১-কে। সেই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন সংস্কৃতিপ্রাণ এ জেলার মানুষরা।