ঈদযাত্রায় যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় গোবিন্দগঞ্জে এক থেকে দেড় ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে বলে জানান এক যাত্রী।
Published : 09 Apr 2024, 11:35 PM
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় ছয় লেইনের নির্মাণকাজ থমকে আছে। এতে উত্তরের জেলাগুলোতে প্রবেশের সময় ওই এলাকায় যানজট যেন নিত্যদিনের সঙ্গী; যা ঈদযাত্রায় আরও ভোগান্তি বাড়িয়েছে।
উপজেলার পান্তাপাড়া থেকে গোবিন্দগঞ্জ মহিলা কলেজ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় মহাসড়কের দুধারে জায়গা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনও বুঝে পায়নি। ফলে সড়ক সম্প্রসারণের কোনো কাজ শুরু হয়নি। কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।
ঈদযাত্রায় সেখানে গাড়িগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন পরিবহন চালক ও যাত্রীরা।
পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা থেকে মঙ্গলবার গাইবান্ধায় এসেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক আরিফুল ইসলাম আরিফ। তিনি বলেন, “যানজটের কারণে শুধু গোবিন্দগঞ্জে এক থেকে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে।”
এ পথে চলাচলকারী সৌখিন পরিবহনের চালক আব্দুল মোত্তালিব বলেন, “সব মিলিয়ে মঙ্গলবার থেকে গোবিন্দগঞ্জে যানজট তীব্র আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। বুধবার হয়ত আরও ভয়াভয় আকার ধারণ করবে।”
গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ জানায়, ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়কের ৩২ কিলোমিটার পড়েছে গাইবান্ধা জেলায়। দক্ষিণে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ফাঁসিতলা থেকে উত্তরে সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট পর্যন্ত মহাসড়কটি বিস্তৃত।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশশুলোর মধ্যে আন্ত:যোগাযোগে একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পের নাম দেয় ‘সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওয়ানাল ইকোনমিক করপোরেশন’ (সাসেক)। প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ হাতে নেওয়া হয়।
গাইবান্ধায় ৩০ কিলোমিটার অংশের কাজের দায়িত্ব পায় চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন-সিএসসিইসি’। এ অংশের কাজের জন্য ২০১৮ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে কাজ শুরু হয়। সময়সীমা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বরে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এখনও তা শেষ হয়নি।
চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মহাসড়ক দিয়ে উত্তরের গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের পথে যানবাহন চলাচল করে।
ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়কের ছয় লেনের কাজ সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও রংপুর অংশে মোটামুটি শেষ হয়েছে। ফলে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেড়ে যানবাহন খুব দ্রুত গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরে ঢুকে পড়ে। আবার দিনাজপুর-রংপুরসহ উত্তরের আট জেলার যানবাহন দ্রুত গতিতে গোবিন্দগঞ্জ শহরে চলে আসে।
গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় যাতায়াতকারী বিসমিল্লাহ পরিবহনের চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, “গোবিন্দগঞ্জের পান্তাপাড়া থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশের ছয় লেনের সম্প্রসারণের কাজ এখন শুরু হয়নি। এই অংশটুকুর সড়ক বেশ সরু অর্থাৎ দুই লেইনের। এতে করে উভয় দিক থেকে আসা যানবাহনের প্রচণ্ড চাপে ভয়াভয় যানজটের সৃষ্টি হয়।”
একই পথে চলাচলকারী সৌখিন পরিবহনের চালক আব্দুল মোত্তালিব বলেন, “ঈদে বাড়ি আসা মানুষের প্রাইভেট কার এবং পোশাক শ্রমিকদের রির্জাভ করে নিয়ে আসা বাসের বাড়তি চাপ থাকে মহাসড়কে। অপরদিকে এই অংশে সড়কের দুই ধারে যাত্রীর জন্য অপেক্ষামান ইজিবাইক, অটোরিকশা, রিকশাভ্যান দাঁড়িয়ে থাকে। এটাও এখানে যানজটের আরেকটা কারণ।”
এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশের রংপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হরেশ্বর রায় বলেন, “গোবিন্দগঞ্জের যানজটের বিষয়টি পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এরই মধ্যে হাইওয়ে পুলিশ অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।”
পুলিশ জানায়, ঈদকে কেন্দ্র করে যানজটের আশঙ্কা থেকেই মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দুপাশে ফুটপাত ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
কেন কাজ হয়নি
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাজ শুরুর প্রায় সাড়ে তিন বছরে ২৫ কিলোমিটার অংশে মহসড়কের পাশের জমি বুঝে পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি আরও ৩ কিলোমিটার অংশে জমি বুঝে পেয়েছে। কিন্তু বাকি দুই কিলোমিটার অংশের জমি এখনও বুঝিয়ে দেয়নি জেলা প্রশাসনের ভূমি (এলএ) শাখা।
গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে জমি অধিগ্রহণ আটকে আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সিএসসিইসির পরিকল্পনা প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন বলেন, “মহাসড়কটি হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষের সুবিধা হবে। আগামী ৩০-৪০ বছর তাদের যাতায়াতের দুর্ভোগ কমবে। কিন্তু জমি বুঝে না পাওয়ায় সাড়ে তিন বছর চেষ্টা করেও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরের দুই কিলোমিটার অংশের কাজে হাত দেওয়া যায়নি।
উপজেলা শহরের এই অংশে উড়ালসড়ক হবে। জমি বুঝে পেলে কয়েক মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে মনে করেন এই প্রকৌশলী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই অংশে মহাসড়কের নির্মাণকাজ প্রায় বন্ধ। মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহর এলাকায় কোনো ভবন এখনও ভাঙা হয়নি।
জমির মালিকরা জানান, অধিগ্রহণের টাকা না বুঝে পাওয়ায় তারা ভবন ভাঙতে দেননি।
মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল এলাকায় পাকা ঘরসহ জমি আছে মো. মোকাররম হোসেনের। তিনি জানান, তিনি এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। এজন্য ঘর ভাঙতে দেননি।
সওজের গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী হায়দার কামরুজ্জামান জানান, তিনি এখানে নতুন এসেছেন, তাই এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাহিদ হাসান সিদ্দিক বলেন, টাকা বরাদ্দ পেতে দেরি হওয়ায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শহরে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া দেরিতে শুরু হয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কের পাশে অনেকে জমির মালিকানা দাবি করে আপত্তি দিয়েছিলেন। অনেকে মিস কেস করেছেন। সেগুলো শুনানি করে নিষ্পত্তি করতে দেরি হয়েছে।
“তবে এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে। জমির মালিকদের টাকা প্রদান করাও শুরু করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ঈদের পরে মহাসড়কের এই অংশে দুই ধারের অবকাঠামো অপসারণ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।”