বিচারককে হুমকি এমপি কমলের, প্রতিবাদ আইনজীবীদের

একজন আইন প্রণেতা হিসেবে এসব কথা বলার অধিকার রয়েছে বলে দাবি এই সংসদ সদস্যের।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2023, 06:04 PM
Updated : 14 March 2023, 06:04 PM

বিচারককে হুমকি দিয়ে কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিবাদে জেলা জজ আদালতের আইনজীবীরা মানববন্ধন করেছেন।

মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন তারা।

মানববন্ধনে আইনজীবীরা সংসদ সদস্য কমলের এই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান।

তবে একজন আইন প্রণেতা হিসেবে এসব কথা বলার অধিকার রয়েছে বলে দাবি এই সংসদ সদস্যের।

 গত ১১ মার্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো একটি ভিডিও বক্তব্যে সাইমুম সরওয়ার কমলকে বলতে শোনা যায়, “রামুর একজন শিক্ষক জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হলো। আমি জজ সাহেবের সাথে কথা বলেছি। ঘটনা মিথ্যা, কোনো ঘটনা নাই। জমি-জমা নিয়ে গণ্ডগোল, সেখানে কোনো মারামরি ঘটে নাই, কোনো ভিডিও ফুটেজ নাই, সাক্ষী নাই।

 “কিন্তু একজন পেশকার জজ সাহেবকে ম্যানেজ করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দিয়েছে। আমি বেঁচে থাকতে তাকে জেলে যেতে দেব না। তাকে যদি জেলে যেতে হয়, আমি বেঁচে থাকতে যে জজ সাহেব সেই মিথ্যা মামলা করেছে, তাকে আমি জীবনে ভাত খেতে দেব না। তাকে আমি চাকরি করতে আর দেব না।”

কক্সবাজারের রামু উপজেলায় শিক্ষকদের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের এক পর্যায়ে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এসব কথা বলেন।

এ ভিডিওটি ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের আইনজীবীরা মানবন্ধন করেন।

মানববন্ধনে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি আমির হোসেন বলেন, সংসদ সদস্য কমলের এমন বক্তব্য কোনোভাবে বরাদাস্ত করার মতো নয়। মানুষের আশা-ভরসার আশ্রয়স্থল হলো আদালত। মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়। একটি মামলা করায় আদালতের বিরুদ্ধে যদি হুমকি প্রদর্শন নিন্দনীয়।

দুদকের আইনজীবী আব্দুর রহিম বলেন, “আমরা সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। একজন সংসদ সদস্যের প্রকাশ্য সমাবেশে অশ্লীল ভাষায় আদালতের বিচারককে হুমকি প্রদর্শন করা চরম ধৃষ্টতা।

“আমরাও আইনের মানুষ। তিনিও আইন প্রণেতা হিসেবে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে, আমরা মগের মুল্লুকে বসবাস করছি। বিচারককে ভাত খেতে দেবেন না, চাকরি করতে দেবেন না – এ অধিকার আপনাকে সংবিধান বা সরকার আপনাকে দেয়নি।

“তাই অচিরে ক্ষমা চেয়ে এ বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আমরা আইনজীবীরা আপনার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।”

আইনজীবী রিদুয়ান আলী বলেন, একজন সংসদ সদস্য কীভাবে বলতে পারেন বিচারককে তিনি ভাত খেতে দেবেন না। একটি সভ্য দেশে, সভ্য সমাজে এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য সভ্য সমাজ কখনও আশা করতে পারে না। আজকে বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় সেই জায়গায় বিচারকদের বিরুদ্ধে, আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ন্যক্কারজনক বক্তব্য মেনে নেওয়া যায় না।

মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আবু তাহের, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নুরুল ইসলাম নুরু, আইনজীবী নুর মোহাম্মদ মামুন, খোরদেশ আলম গুনু বক্তব্য রাখেন।

মানববন্ধনে সংসদ সদস্যকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, যে মামলাটি হয়েছে তা একজন পেশকারের কথায় হয়েছে। মামলাটি মিথ্যা। যেখানে একজন শিক্ষক, দুই জন জনপ্রতিনিধি, একজন সাংবাদিক আসামি।

একটি মিথ্যা মামলায় এরা জেলে যাবে তা একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি মেনে নিতে পারেন না বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, যে জজ মামলাটি নিয়েছেন তার আদালতে মিথ্যা মামলা রেকর্ড হওয়ার অভিযোগ আগে থেকে আছে। একজন আইন প্রণেতা হিসেবে তিনি তা বলেছেন তা ঠিক আছে।

তিনি আরও বলেন, যে আইনজীবীরা মানববন্ধন করেছেন তারা ‘চিহ্নিত জামাত-বিএনপির’ লোক। সামনের সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বির্তক তৈরির চেষ্টায় এ মানববন্ধন। অথচ কিছু দিন আগেও এসব আইনজীবী ওই জজকে বর্জন করে আন্দোলন করেছেন।

এ পর্যন্ত তিনি যা করেছেন তা জনগণের পক্ষে করেছেন; জনপ্রতিনিধি হিসেবে তা করা তার কর্তব্য বলেও মনে করেন এমপি কমল।