রাবি শিক্ষার্থী নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ, অনশন

শিক্ষাঙ্গণে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদে অনশন করেন অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিন খান।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2023, 01:27 PM
Updated : 16 Feb 2023, 01:27 PM

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাবির রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের দক্ষিণ ফটকের সামনে এ সমাবেশ করেন তারা।

একই দিনে এ ঘটনার পাশাপাশি সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের নিপীড়নের প্রতিবাদে অনশনে বসেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিন খান।

সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জোহা চত্বরে তিনি অনশনে বসেন।

গত রোববার রাতে হলকক্ষে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীরা নির্যাতনের পাশাপাশি শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকিও দেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কৃষ্ণ রায় নামের এক শিক্ষার্থী।

ওই শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভ সমাবেশের সঞ্চালনা করেন একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ ফাহিম আহমেদ।

তিনি প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোয় ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, মারধর, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সিট-বাণিজ্যের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ ও তদন্তের বিষয়ে এক সমীকরণ তুলে ধরেন।

শেখ ফাহিম জানান, গত ২০২১ ও ২০২২ সালে অন্তত ২৩টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া অভিযোগের ১৩টি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে মাত্র ৬টির।

মানববন্ধনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, “গত কয়েকদিনে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজন শিক্ষার্থীকে শিবিরের তকমা দিয়ে রাতভর নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের যখন আইসিইউতে রাখা হচ্ছে, তখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের ছেলেরা গিয়ে বলছে, ‘যদি নাম বলিস তাহলে এখান থেকে আর বের হতে পারবি না।‘ এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম?”

“এরপর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের এক মেয়েকে রাতভর নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে নোংরা গ্লাসে পানি খেতে দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তারা তাতে ক্ষান্ত হননি। বিবস্ত্র করে তার ভিডিও করা হয়েছে। কে করেছে? একজন ছাত্রলীগ নেত্রী। ক্যাম্পাস হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ জায়গা কিন্তু আমার শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সব থেকে অনিরাপদ।”

একই বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, “ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা বসবাসের উপযোগিতা হারিয়ে ফেলছে। নিয়মিতই সেখানে নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছুই করতে পারছে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে থাকার পরিবেশ নাই। আমার ছাত্র কৃষ্ণকে শিবির আখ্যা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।”

ছাত্রলীগের এমন ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ না থামলে আরও কঠোর অবস্থানে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করেন রাবির লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সপ্নীল রহমান।

কৃষ্ণ রায়ের সহপাঠী মো. অপি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা পড়ি, আমাদের মেধার যোগ্যতায় আমরা এখানে চান্স পেয়েছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে একটি সিট আমাদের নৈতিক দাবি, পবিত্র অধিকার, এটি আমাদের একটি আমানত। এই আমানতের খর্ব হতে দেব না।”

এ সময় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুল, সহযোগী অধ্যাপক এবিএম সাইফুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক আব্দুল্লাহহীল বাকীসহ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে প্রশাসন ভবনের সামনে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. ফরিদ উদ্দিন খানের সঙ্গে অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে যোগ দেয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

নির্যাতন ও হত্যার হুমকির অভিযোগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়।

হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমানসহ ছাত্রলীগের সাত/আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি।

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর এ বিষয়ে বুধবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান।

আরও পড়ুন:

Also Read: রাবিতে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন