রাবিতে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

নির্যাতনের পাশাপাশি ওই শিক্ষার্থীকে শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগে বলা হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
Published : 15 Feb 2023, 05:21 PM
Updated : 15 Feb 2023, 05:21 PM

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বুধবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান।

এর আগে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ওই হলের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়।

গত রোববার রাতে হল কক্ষে নির্যাতনের পাশাপাশি তাকে শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন কৃষ্ণ রায়।

প্রাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়ে আজ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের কাছে হলগুলো শান্তির জায়গা। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে তারা সেখানে বিশ্রাম নেবে এবং পড়াশোনা করবে। কিন্তু কাউকে শিবির ট্যাগ দিয়ে মারা – এটা ঠিক না। আর যে ছেলেরা মারধর করেছে তারা কেউ আবাসিক শিক্ষার্থী না। কোনো অন্যায় করলেও কেউ হল প্রশাসনকে না জানিয়ে হলের কোনো শিক্ষার্থীকে মারধর করতে পারে না।”

“হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম হলের মিডল ব্লকের নাম লিখে রেখেছে সেক্রেটারি ব্লক। এটা তো তার নিজের সম্পত্তি না,” বলেন এ প্রাধ্যক্ষ।

অভিযোগকারী কৃষ্ণ রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।

তিনি হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমানসহ ছাত্রলীগের সাত/আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগে কৃষ্ণ রায় আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রদীপ কুমার পাণ্ডের সুপারিশে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আমি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ৩৮৩ নম্বর কক্ষে আছি। গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলামের সাত/আট অনুসারীসহ রুমে এসে আমাকে বের হয়ে যেতে বলেন। আমি যেতে না চাইলে আমার বিছানা ফেলে দিয়ে আরেকজনকে তুলে দেয় তারা। এ সময় এক ছাত্রলীগ নেতা আমাকে মারধর করেন। পরে আমাকে সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলামের রুমে নিয়ে মারধর ও মানসিক নির্যাতন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়।

“এক পর্যায়ে নাঈম বলেন, ‘তোকে মেরে শিবির বলে চালিয়ে দেব।’ কিন্তু আমি হিন্দু জানার পর বলেন – এখন তো তোকে মেরে ফেললেও কেউ কিছু করতে পারবে না।”

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মাহবুব বিল্লাহ বলেন, “ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যে কক্ষে এসে ঝামেলা করতে পারে, বিষয়টি ঘটনার দিনই কৃষ্ণ আঁচ করতে পেরেছিল। তাই তখনই বিষয়টি ও আমাকে জানিয়েছিল। আমি তখন হলের নিচেই ছিলাম। কল পেয়েই দ্রুত কৃষ্ণের কক্ষে গিয়ে দেখি, ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী কৃষ্ণের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে। কৃষ্ণ ঘটনাটি মোবাইল ফোনে ভিডিও করার চেষ্টা করছিল। কিছু সময় পর ছাত্রলীগের কর্মীরা সেখান থেকে চলে গেলে কৃষ্ণ ও আমি বিভাগের বড় ভাইদের বিষয়টি জানাই।”

তবে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম নির্যাতন ও হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, “কৃষ্ণ রায় একই অভিযোগ প্রক্টর দপ্তরেও দিয়েছেন। যেহেতু ঘটনাটি হলের ভেতরের, তাই হল প্রশাসনই এটা তদন্ত করবে। তবে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চাইলে তারা সেটা পাবেন।”