২ বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি জবি ছাত্রলীগের কমিটি, নারী নেতৃত্বও নিষ্ক্রিয়

পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা কেন্দ্রীয় সেলে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক; তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলছে, কোনো তালিকাই তারা পায়নি।

অনুপম মল্লিক আদিত্যবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2024, 04:38 PM
Updated : 8 March 2024, 04:38 PM

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণার দুই বছর পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন পদপ্রত্যাশীদের অনেকে।

তাদের অভিযোগ, ‘ব্যক্তি স্বার্থে’ আংশিক কমিটি ধরে রেখেই ‘নড়বড়েভাবে’ সংগঠন চালাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

সেই আংশিক কমিটিতে জায়গা পাওয়া চার নারী নেত্রীর কেউই এখন সক্রিয় নন। তাদের কেউ বিবাহিত, চাকরিজীবী, আবার ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের পদে থাকলেও জায়গা পেয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটিতে।

অভিযাগ অস্বীকার করে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা মাস দুই আগে তারা জমা দিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। যদিও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলছে ভিন্ন কথা।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির কোনো তালিকাই পাননি।

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তাতে সভাপতি পদে ইব্রাহীম ফরাজী ও সাধারণ সম্পাদক পদে আকতার হোসেন নেতৃত্বে আসেন।

এই কমিটিতে জায়গা পান চার নারী নেত্রী। তাদের মধ্যে দুজনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাকি দুজনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।

আংশিক কমিটি গঠনের দীর্ঘদিন পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী মৈত্রী বাড়ৈ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমার প্রথম পরিচয় আমি সাধারণ শিক্ষার্থী, তারপরে আমি ছাত্রলীগের কর্মী। দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় ইতোমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে। ব্যক্তি স্বার্থে সংগঠন জিম্মি থাকতে পারে না। সংগঠন তার নির্দিষ্ট গতিতে চললে সকলের জন্যই মঙ্গল।”

জবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিঠুন বাড়ৈ বলেন, “বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সুপার ইউনিট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, অথচ এই ইউনিট আজ কর্মী সংকটে ভুগছে। এর দায়ভার পুরোটাই প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারির। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যারা যায়, তাদেরকে তারা শুরু থেকেই রাজনীতি করতে দিচ্ছে না। তারা সংগঠনকে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করে সংগঠনকে পুরোপুরি দেউলিয়া করেছে। এজন্যই তারা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করছে না। কেন্দ্রীয় নির্দেশ থাকার পরেও বিভিন্ন অজুহাতে তারা কালক্ষেপণ করছে।”

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঋত্ত্বিক রায় বাহাদুর সম্প্রতি ফেসইবুকে একটি পোস্টের মন্তব্যের ঘরে লেখেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সদিচ্ছার অভাব সব থেকে বেশি ৷ তারা মনে করে, কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের ক্ষতি হবে ৷

“এছাড়া কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন গ্রুপ লিডার নিজেদের গ্রুপ তৈরি করবে, তখন কর্মীদের কাছ থেকে সভাপতি-সেক্রেটারি আর প্রটোকল পাবে না, কর্মীরা তখন ক্যাম্পাসে গ্রুপ লিডারদের সময় দিবে ৷ বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি হলে গ্রুপ লিডাররা সভাপতি-সেক্রেটারির ব্যক্তিস্বার্থে আঘাত করতে পারে, এ ভয়ও কাজ করে ৷ বর্তমান সভাপতি-সেক্রেটারিও সেই ধারায় চলছে ৷ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে বার বার পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য তাগদা দেওয়ার পরও তারা এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি (তালিকা) জমা দেয়নি।”

তবে নেতাকর্মীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে তারা একটি কমিটির তালিকা পাঠিয়েছিলেন।

সেই তালিকা সংশোধন করে পুনরায় পাঠানোর কথা জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আক্তার বলেন, “কিছু নাম বাদ দিয়ে নতুন কিছু নাম যোগ করতে হচ্ছে। খুব দ্রুতই আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।”

জবি শাখা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য

জবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ব্যাপারে জানতে চাইলে সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা নির্বাচনের আগে একটা পূর্ণাঙ্গ কমিটি সেন্ট্রালে পাঠিয়েছি। তবে নির্বাচনে অনেকেই নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তাদের নাম বাদ যাবে।

“আবার অনেকেই সদ্য বিবাহিত, অন্যান্য অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে সেখানে নতুন কিছু নাম যাবে। এখন সেন্ট্রালের সঙ্গে আমাদের সমন্বয় হলেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়ে যাবে।”

তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির কোনো তালিকা তারা পাননি।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাদের তো এমনটা বলার কথা না। তারা কেউ পূর্ণাঙ্গ কমিটির কোনো তালিকা আমাদের দেয় নাই। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব, তারা কেন বলল তালিকা দিয়েছে।”

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জগন্নাথের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সবার সমন্বয় হয়ে গেলেই আমরা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারব।”

কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে পূর্ণাঙ্গ কমিটির কোনো তালিকা জমা পড়েছে কি না- এমন প্রশ্নে মন্তব্য করতে রাজি হননি পান্থ।

নারী নেত্রী চার জনই নিষ্ক্রিয়

জবি ছাত্রলীগের আংশিক কমিটিতে জায়গা পাওয়া চার নেত্রীর মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তি ও মুন্নী আক্তার। সাংগঠনিক সম্পাদক হন জিনিয়া আফ্রিন ও সৈয়দ হাফসা ফারিহা উর্মি।

এর মধ্যে ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তি গত বছরের জুলাইয়ে পুলিশের এক এসআইকে বিয়ের করেন। বিয়ের পর থেকে তাকে আর ক্যাম্পাস রাজনীতিতে সক্রিয় দেখা যায়নি।

আরেক নেত্রী মুন্নী আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি প্রায় বছরখানেক ধরে ক্যাম্পাসে সক্রিয় নেই। বর্তমানে ফ্যামিলিসহ যাত্রাবাড়ীতে থাকি। আর বন্ধুবান্ধবরা মজার ছলে বলে ফেলে- কী রে, বিয়ে করেছিস নাকি?...এ পর্যন্তই।

“আমি দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে যাচ্ছি না, আমাকে দিয়ে কারো রাজনৈতিক সুবিধা হচ্ছে না, সেজন্য অনেকেই অনেক কথা বলবে। আমি বিয়ে করি নাই, আর আগামীতে ছাত্ররাজনীতি নিয়েও আমি আগ্রহী না।”

অপরদিকে জবি ছাত্রলীগের পদে থাকলেও আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির ‘সদস্য’ হয়েছেন জিনিয়া আফ্রিন। ক্যাম্পাস রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই তার সক্রিয়তা নেই।

জিনিয়া বলেন, “আমার কাজের ধরন অনুযায়ী আমার সিনিয়র নেতারা আমাকে দিয়ে কাজ করাবেন বলেই আওয়ামী লীগের উপকমিটির পদ দিয়েছেন। আমি কাজ করব।”

আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতি একসঙ্গে চালিয়ে যাবেন নাকি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখন তো তাই করছি। তবে ভবিষ্যতে কী করব না করব, সেটা সময় আসলে বলা যাবে।”

এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক ফারিহা উর্মি এখন এনআরবিসি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় চাকরি করছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে পদ পাওয়ার পর থেকেই তিনি নিস্ক্রিয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে উর্মি বলেন, “একবার তো সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছি, আর ইচ্ছা নাই। আপাতত চাকরি করছি।”