স্মরণোৎসব শুরুর আগেই সাধু-ভক্ত-আশেকানরা ঠাঁই নিয়েছেন তীর্থ ধাম ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে।
Published : 16 Oct 2022, 09:25 PM
ফকির লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস উপলক্ষে তিন দিনের স্মরণোৎসব শুরু হচ্ছে সোমবার থেকে।
এ দিন সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ এ স্মরণোৎসবের উদ্বোধন করবেন।
লালন একাডেমি, জেলা প্রশাসন ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় লালন সাঁই এর ১৩২তম তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানটি হচ্ছে।
এ দিকে স্মরণোৎসব শুরুর আগেই সাধু-ভক্ত-আশেকানরা ঠাঁই নিয়েছেন তীর্থ ধাম ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে।
সেখানে সাধুদের ঘিরে খণ্ড খণ্ড মজমায় চলছে ভাবের আদান-প্রদান আর তত্ত্ব আলোচনা। এ উপলক্ষে আখড়াবাড়ির মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলাও।
লালন সাঁইয়ের মাজারের খাদেম মোহাম্মদ আলী শাহ বলেন, “দূর-দূরান্ত থেকে এখানে আসা ভক্তরা মনে করেন, দুই হাজার বছর আগে দার্শনিক সক্রেটিসের সেই বিখ্যাত বাণী ‘নিজেকে জানো’ এর মতো মর্মকথা যেভাবে মানুষের মনে দাগ কেটেছিল এবং বিশ্ব সভ্যতার ক্রমবিকাশকে প্রভাবিত করেছিল। এতকাল পর এসে আধ্যাত্মিক চিন্তার দার্শনিক মহামতি লালনের সংগীত ও ধর্ম-দর্শন নিয়ে দেশ-বিদেশে মুক্তচিন্তক গবেষকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।”
‘এখানে গুরুবাণীর চর্চার মধ্যে দিয়ে মানবাত্মা ও পরমাত্মার মিলন ঘটে’ বলে মনে করেন বিশিষ্ট নাট্যকার ও লোক গবেষক সাইমন জাকারিয়া।
তিনি বলেন, “বাউল সাধক ফকির লালন ছিলেন আধ্যাত্মিক দর্শন ও ভাব-জগতের শিরোমণি। ফকির লালন সাঁইজি একাধারে গীতিকার, সুরকার, গায়ক, বাউল সম্প্রদায়ের গুরু, ধর্ম-বর্ণ- গোত্র সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে মানবতাবাদী মনীষী ও লৌকিক ধর্মাচার প্রতিষ্ঠার অন্যতম পুরোধা।”
তিনি আরও বলেন, “লালন কেবল বাংলাদেশ বা ভারতবর্ষ নয়, গোটা বিশ্বের গবেষকদের কাছে আগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর প্রথম সারির অন্তত তিন ডজন বিশ্ববিদ্যালয়ে লালনকে নিয়ে গবেষণা চলছে। লালন কুষ্টিয়ার নয়, বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বের সম্পদ। এখন কথা হলো, লালন যে পারিপার্শ্বিকতা ও জীবনাচারের মধ্যদিয়ে লালন হয়েছেন সেই বাস্তবতা থেকে সরে গিয়ে তো তাকে জানা যাবে না। লালন বুঝতে, জানতে বা ভাবতে চাইলে লালন অনুসারী সাধু-গুরু-বাউল ফকিরদের মতো করেই তা করতে হবে। জোর করে বা চাপিয়ে দেওয়া নিয়ম-নীতির মধ্যদিয়ে লালনচর্চা অসম্ভব।”
এদিকে, লালন সাঁইয়ের ১৩২তম স্মরণোৎসব উদযাপনে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “এখানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লালনভক্ত, অনুসারী, বাউল সাধকদের আচার-অনুষ্ঠান পালনের সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তাদের খাবার, শৌচকর্ম, স্থান সংকুলানসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করি, সবকিছু সুন্দর পরিবেশের মধ্যদিয়ে শেষ করতে পারব।”