মামলায় বলা হয়, খুলনার বটিয়াঘাটার সাদিয়ার অনুশীলনের ছবি বাবা-মাকে দেখিয়ে আজেবাজে মন্তব্য এবং তাদের অপমান-অপদস্ত করা হয়।
Published : 01 Aug 2023, 12:12 AM
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলায় এক নারী ফুটবলারের অনুশীলনের ছবি দেখিয়ে পরিবারকে অপমান-অপদস্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় ওই খেলোয়ার এবং তার সতীর্থদের মারধর করা হয়েছে।
খুলনা অনুর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবল দলের সদস্য সাদিয়া নাসরীন রোববার বটিয়াঘাটা থানায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। এরপর পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
মামলার আসামিরা হলেন- উপজেলার তেঁতুলতলা স্কুল মাঠ এলাকার সালাউদ্দিন (২২), নুর আলম (৪৮), রঞ্জি বেগম (৪০), মনোয়ারা বেগম (৫৫) ও নুপুর খাতুন (২২)। বাকি একজন কিশোর।
এর মধ্যে রোববার নূর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তেঁতুলতলা গ্রামের সাদিয়া নাসরিন স্থানীয় ‘সুপার কুইন ফুটবল একাডেমিতে’ নিয়মিত অনুশীলন করেন। তাকে প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের কাছ থেকে লাঞ্ছণার শিকার হতে হয়।
গত বৃহস্পতিবার একাডেমিতে অনুশীলনের সময় নুপুর খাতুন নামে এক নারী মোবাইলে সাদিয়া নাসরিনের একটি ছবি তোলেন। পরে সেই ছবি সাদিয়ার বাবা-মাকে দেখিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেন এবং তাদের অপমান-অপদস্ত করেন। এ নিয়ে সাদিয়ার বাবা-মা তাকে বকাঝকা করেন।
শনিবার বিকালে ছবি তুলে কেন বাবা-মাকে দেখিয়ে আজেবাজে কথা বলা হয়েছে সে ব্যাপারে সাদিয়া নুপুরের কাছে জানতে চান। এ নিয়ে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নুপুর গালিগালাজ করেন এবং প্রতিবাদ করলে মারধর করেন বলে মামলায় বলেছেন সাদিয়া।
এতে আরও বলা হয়, বিষয়টি ক্লাবের কোচ মুস্তাকুজ্জামান মুস্তাক ও সতীর্থ খেলোয়াড়দের জানান সাদিয়া। তারা ওইদিন সন্ধ্যায় সাদিয়াকে সঙ্গে নিয়ে নুপুরের বাড়িতে যান। তখন অন্যদের সঙ্গে খেলোয়ার মঙ্গলী বাগচি, হাজেরা ও জুঁই ছিলেন। এতে নুপুরের পরিবারের লোকজন সাদিয়াদের ওপর ক্ষুব্ধ হন।
একপর্যায়ে নুপুরের বাড়ির আলাউদ্দিন, সালাউদ্দিন, নুর আলম, রঞ্জি বেগম ও মনোয়ারা তাদের উপর হামলা চালান। এতে সাদিয়া, মঙ্গলী, হাজেরা ও জুঁই আহত হন। সালাউদ্দিনের লোহার রডের আঘাতে মঙ্গলীর মাথা ফেটে যায়। পরে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
নারী ফুটবলার সাদিয়া নাসরিন সোমবার বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, “স্থানীয়দের কটূক্তির প্রতিবাদ করায় আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। যেসব স্থানীয় ব্যক্তি আমাদের খেলার বিরোধিতা করে থাকেন, নুপুরের পরিবারের সঙ্গে জোট করে তারাই আমাদের মেরেছেন এবং হত্যার হুমকি দেন।”
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে একাডেমির কোচ মুস্তাকুজ্জামান মুস্তাক বলেন, “সাদিয়াকে মারধরের কারণ জানতে আমরা নুপুরদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে তারা হামলা করবে, ভাবিনি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।”
তেঁতুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ‘সুপার কুইন ফুটবল একাডেমি’র প্রশিক্ষক দেবাশীষ কুমার মণ্ডল বলেন, “সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেকেই চান না মেয়েরা ফুটবল খেলুক। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনা জরুরি। সাদিয়া একজন ভাল খেলোয়াড়।”