আমার বাবা দেশের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকতেন। এই কারণেই, মৃত্যুর পূর্বেই ওনার শরীর মেডিকেল শিক্ষার্থীদের গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য দান করেন।”
Published : 21 Apr 2024, 01:07 AM
ফুলেল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার শিব নারায়ণ দাশকে শেষ বিদায় জানিয়েছে কুমিল্লাবাসী।
শনিবার বিকাল ৪টায় কুমিল্লা টাউনহল প্রাঙ্গনে লাশবাহী ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে শিব নারায়ণ দাসের মরদেহ রাখা হয়। সেখানে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও কুমিল্লার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
৭৮ বছর বয়সী জাসদ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাশ শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান।
শিব নারায়ণ দাশের মরদেহে প্রথমে আওয়ামী লীগ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
পরে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি, ভিক্টোরিয়া কলেজ রোবার স্কাউট, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, উদিচি কুমিল্লা, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ, কুমিল্লা মহানগর বিএনপি, কুমিল্লা মহানগর কৃষকলীগ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, কমিউনিস্ট পার্টি কুমিল্লা জেলা, পূর্বাশা-মধুমিতা ও কচিকাঁচার মেলা, খেলাঘর কুমিল্লা, যুব ইউনিয়ন, কুমিল্লা ক্লাব, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন ন্যাপ-গ্যারিলা পার্টি, জাকের হোসেন ফাউন্ডেশন, মোস্তফা কামাল ফাউন্ডেশন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট, বন্ধু ফোরাম কুমিল্লা, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ একে একে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, “শিবু দা মহান মুক্তিযোদ্ধার সংগঠন ও আমার নেতা। এই জাতি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারিয়েছে। শিবু দার মাঝে রাজনীতি নিয়ে কোনো ক্লান্তি ছিল না।
উনি আমাদেরকে হাতে পোস্টার বানিয়ে দিতেন। আমরা পুরো শহর সেই পোস্টার বিলিয়ে দিতাম। এমন একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদকে কুমিল্লার মানুষ হারিয়েছে। যতদিন বাংলাদেশের ইতিহাস থাকবে, ততদিন এই জাতি তাকে স্মরণ করবে।”
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হাসান পাখি বলেন, “শীবু দা আমার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন, তিনি একজন অসাধারণ ব্যক্তি ও আপাদমস্তক একজন দেশপ্রেমিক। তার দেহ এবং চোখের কর্নিয়া দেশের জন্য দান করে গেছেন।
“কুমিল্লায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর পর মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে হস্তান্তর করা হবে। আমরা গর্বিত যে, শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত আমরা তাকে শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছি।”
সাহিত্যিক ও গবেষক ড. আলী হোসেন চৌধুরী বলেন, “তিনি একজন সৎ ও মিশুক মানুষ ছিলেন। এমন মানুষ বিরল। আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে বিদায় জানিয়েছি। এই জাতি তাকে আজীবন স্মরণ রাখবে।”
আবৃত্তিজোট কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, শিব নারায়ণ দাসের নকশা করা পতাকা বাংলার আকাশে প্রথম উড়েছিল। সেই শিব নারায়ণ দাশ কুমিল্লার সন্তান। এটা আমাদের কুমিল্লাবাসীর জন্য গৌরবের ও অহংকারের। তার শেষ বিদায়ে আমরা যথাযোগ্য মর্যাদায় সহিত তাকে বিদায় জানিয়েছি।”
জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “তিনি একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পতাকা শিব নারায়ণ দাসের হাতেই হয়েছিল। তিনি কখনো নিজের জন্য ভাবেননি। উনিই প্রথম কুমিল্লার টাউনহল মাঠে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়েছিল। আমরা সবার পক্ষ দাবি জানাই, শিব নারায়ণ দাশকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হোক।”
সকলের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শিব নারায়ণ দাসের সহধর্মিনী বীর মুক্তিযোদ্ধা গীতশ্রী চৌধুরী বলেন, “আমি ৫৫ বছর ধরে তার সঙ্গে ছিলাম। সেই যুদ্ধের সময়কাল থেকে। এই কুমিল্লা শিব নারায়ণ দাশের প্রাণের কুমিল্লা। শেষ সময় পর্যন্ত কুমিল্লাবাসী শিব নারায়ণ দাসের পাশে ছিলেন। আমরা কৃতজ্ঞ।”
শিব নারায়ণ দাশের ছেলে আদিত্য অর্ণব বলেন, “আজকে আমার বাবাকে শ্রদ্ধা জানাতে যারা এখানে এসেছেন সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমার বাবা সবসময় চাইতেন, দুঃখ ও দূর্দশামুক্ত হয়ে এই দেশ যাতে সামনে এগিয়ে যায়। আমার বাবা দেশের জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকতেন।
“এই কারণেই, আমার বাবা মৃত্যুর পূর্বেই ওনার শরীর মেডিকেল শিক্ষার্থীদের গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য দান করেন। আমি আমার বাবার আদর্শ লালন করে বড় হতে চাই।”