উপজেলার একটি মাদ্রাসাতেও শহীদ মিনার নেই। এছাড়া ৯০ ভাগ প্রাথমিক, ২৯ ভাগ মাধ্যমিক ও ৫৮ ভাগ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই।
Published : 18 Feb 2024, 02:02 PM
দু’দিন পরই বাঙালি জাতিসত্তার গৌরবোজ্জ্বল ও স্মৃতিবিজড়িত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’র বাহাত্তর বছর পূর্ণ হবে। তবে এবারও নিজের প্রতিষ্ঠানের অঙ্গনে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারবে না যশোরের শার্শা উপজেলার প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
নিজেদের প্রতিষ্ঠানে কোনো শহীদ মিনার না থাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এসব শিক্ষার্থীকে যেতে হবে নিকটবর্তী কোনো শহীদ মিনারে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শার্শা উপজেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার মোট সংখ্যা ২৬২টি। এর মধ্যে শহীদ মিনার আছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৫৪টি।
উপজেলার একটি মাদ্রাসাতেও শহীদ মিনার নেই। এছাড়া ৯০ ভাগ প্রাথমিক, ২৯ ভাগ মাধ্যমিক ও ৫৮ ভাগ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই।
শার্শা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়ালিয়ার রহমান বলেন, উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৫টি, এর মধ্যে মাত্র ২৪টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে।
এছাড়া উপজেলায় প্রি-ক্যাডেট এবং কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৪টি। সব মিলিয়ে ১৭৯টি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫৫টিতেই কোনো শহীদ মিনার নেই।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা চৌধুরী হাফিজুর রহমান বলেন, উপজেলায় ৩৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৫টিতে শহীদ মিনার আছে। ১২টি কলেজের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে শহীদ মিনার আছে। ৩৩টি মাদ্রাসার কোনোটিতেই শহীদ মিনার নেই।
হাফিজুর আরও বলেন, “সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেওয়ার পরও তারা নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।”
শার্শা উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক উসমান গনি মুকুল বলেন, “সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় ১০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। তারপরও সব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্থানীয়ভাবে অর্থ জোগাড় করে শহীদ মিনার নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।”
উপজেলার সামটা ছিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোমিনুল ইসলাম বলেন, “অর্থ বরাদ্দ না থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এক কিলোমিটার দূরের শহীদ মিনারে যায়।”
নাভারন ফজিলাতুননেছা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ লায়লা আফরোজ বানু মলি বলেন, “আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার না থাকায় বুরুজবাগান হাইস্কুলের শহীদ মিনারে আমরা শ্রদ্ধা নিবেদন করি। ”
তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার নির্মাণের ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান তিনি।
উপজেলার সামটা পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন বলেন, “আমাগের স্কুলি শহীদ মিনার নেই। তাই খুব খারাপ লাগে। আমরা কলাগাছের শহীদ মিনার বানিয়ে তাতে ফুল দেই। এবার স্কুল বন্ধ তাই বাড়ি বসে থাকব।”
শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার রাজবংশী বলেন, “শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও কোনো বরাদ্দ নেই। এটি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ (কমিটি) স্থানীয়ভাবে ফান্ড সংগ্রহ করে নির্মাণ করতে পারেন।
“ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি-বেসরকারিভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।”