এই সিদ্ধান্ত আগামী ২৩ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলেও জানিয়েছেন ইবি রেজিষ্ট্রার।
Published : 21 Aug 2023, 07:39 PM
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ এইচ এম আলী হাসান।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন- পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের প্রাক্তন সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল শাখার সাবেক সহসভাপতি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাচ্ছুম ইসলাম, কর্মী মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম এবং ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মী।
এই সিদ্ধান্ত আগামী ২৩ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলেও জানিয়েছেন ইবি রেজিষ্ট্রার।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ডেকে রাত ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে আরও কয়েকজন নির্যাতন করে নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরীকে তাকে বিবস্ত্র করে মারধর এবং নির্যাতনের ঘটনা ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
পরদিন সকালে ভয়ে ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে বাড়ি চলে যান ওই ছাত্রী। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর ঘটনার বিবরণ দিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
এ ঘটনায় আইন বিভাগের অধ্যাপক রেবা মন্ডলকে আহ্বায়ক করে ১৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। এছাড়া হল প্রশাসন, শাখা ছাত্রলীগও একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এ ঘটনা তুলে ধরে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট গ্রহণ করে এ বিষয়ে ওই আইনজীবীর কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চান।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট। মোট তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। যার দুটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং একটি কমিটি গঠিত হয় হাইকোর্টের নিদের্শনা অনুযায়ী।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য হাইকোর্ট ১ মার্চ নির্দেশনা দেয়। সেই নির্দেশনা মেনে পাঁচ শিক্ষার্থীকে ১৫ জুলাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি ও হাইকোর্টের গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস কোড অব কন্ডাক্ট-১৯৮৭ এর পার্ট-২ ধারা-৮ মোতাবেক ১২ মাসের জন্য তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়।
যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি। এ শাস্তি চলাকালীন তারা ক্লাস-পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
বিষয়টি আবারও আদালতের দৃষ্টিতে আনেন রিটাকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন। তিনি আদালতকে জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি প্রাসঙ্গিক পদ্ধতি লঙ্ঘন করে পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে।
আদালতকে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি নয় বরং কোনো অপরাধের জন্য শিক্ষার্থীকে শাস্তি দিতে পারেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ফলে এই শাস্তির বৈধতা যদি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয় তবে তা বাতিল হয়ে যাবে।
এরপর হাইকোর্ট নির্যাতনের দায়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে কোন পদ্ধতিতে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে তা জানতে চায়।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুর রাফেল হাইকোর্টে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট জমা দিয়ে বলেন যে, পাঁচ শিক্ষার্থীকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি প্রাসঙ্গিক পদ্ধতি মেনেই সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা চলাকালে ক্যাম্পাসেই ছিলেন ভুক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরী খাতুন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইবি কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে আমি সন্তুষ্ট। তবে শাস্তি পাওয়া ছাত্রীরা কম প্রভাবশালী নয়, আমি আশা করি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখবে যেন ওরা আমার জন্য ভয়ের কারণ না হয়।”
শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন এই শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন:
ইবি ছাত্রী নির্যাতন: ছাত্রলীগ নেত্রীসহ ৫ শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার
নিপীড়কদের সাজায় খুশি নন ইবির ফুলপরি
ইবির হলে ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে
ইবি হলে ছাত্রী নির্যাতন: ভুক্তভোগীর বক্তব্য শুনবে হল কর্তৃপক্ষ
ছাত্রী নির্যাতন: হাই কোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়নে কাজ শুরু ইবি কর্তৃপক্ষের
তদন্ত কমিটিকে ‘নির্যাতনের’ বর্ণনা দিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষার্থী