“আমরা ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের মাধ্যমে অগ্রসর হয়েছি, তার নিপীড়ন মোকাবিলা করেছি সকলেই,” বলেন তিনি।
Published : 24 Apr 2025, 01:26 PM
গণতন্ত্র ও প্রাতিষ্ঠানিক ঘাটতির কারণে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা চালু হয়েছিল মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বলেছেন, “রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, ছাত্রজনতার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। গত ৫৩ বছর যাবত বাংলাদেশের শাসন কাঠামোয় একধরনের গণতন্ত্রের ঘাটতি আমরা লক্ষ্য করছি, প্রতিষ্ঠানের যে দুর্বলতা লক্ষ্য করেছি, তারাই ধারাবাহিকতায় ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
“সেকারণে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। যাতে করে আমাদের পুনর্বার সেই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে না হয়, পুনর্বার যাতে প্রাণ দিতে না হয়, পুনর্বার যেন গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার মোকাবিলা করতে না হয়।”
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে আমজনতার দলের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের মাধ্যমে অগ্রসর হয়েছি, তার নিপীড়ন মোকাবিলা করেছি সকলেই; প্রত্যেকটি নাগরিক, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক দলের বাইরে যারা- তারা সকলেই মোকাবিলা করেছেন।”
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন।
পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। এরপর সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে দুই ধাপে ১১টি কমিশন গঠন করে।
কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। সেদিন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপিসহ সবগুলো রাজনৈতিক দলের প্রথম বৈঠক হয়।
এরপর সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চায় ঐকমত্য কমিশন। ৩৪টি দল তাদের মতামত তুলে ধরে, যাদের সঙ্গে এখন আলাদা করে বৈঠক করছে কমিশন। ইতোমধ্যে ১৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ করেছে কমিশন। এখন আমজনতার দলের সঙ্গে সংলাপ চলছে।
আলী রীয়াজ বলেন, “আপনাদের মতামতের অনেকক্ষেত্রে আমাদের সুপারিশগুলোর বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছেন। কিছু বিষয়ে ভিন্নমত আছে, কিছু বিষয়ে আংশিকভাবে একমত প্রকাশ করেছেন। যে সমস্ত বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছন তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই।
“যে সমস্ত বিষয়ে ভিন্নমত আছে তা নিয়ে কথা বলব, আমাদের থেকে ব্যাখা দেওয়ার চেষ্টা করব। পাশাপাশি আপনাদের বক্তব্য শুনব।”
মিয়া মশিউজ্জামান নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের নাম বদলে ‘আমজনতার দল’ করা হয় এ বছরের শুরুতে।
সংলাপের জন্য নিজেদের প্রস্তুতি ঘাটতি থাকার কথা জানিয়ে সূচনা বক্তব্যে মশিউজ্জামান বলেন, “স্প্রেডশিটে দেওয়া মতামতের কিছু পরিবর্তন হবে। এটা আপনাদের জন্য অসুবিধা হবে। আগের দেওয়া মতামতের কয়েকটা জায়গায় পরিবর্তন করে চাই।"
বৈঠকে সংবিধান, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে চান মশিউজ্জামান।
তিনি বলেন, “আশা করি, আমাদের আলাপ ফলপ্রসূ হবে। জাতির জন্য সুন্দর ভবিষ্যত রচনায় অবদান রাখতে পারব।"
আমজনতার দলের সভাপতি মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠক উপস্থিত রয়েছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান।