ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছোটানো এনামুল হকের দলে ফেরা অবধারিতই ছিল বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন।
Published : 24 Apr 2025, 01:48 PM
স্বীকৃত ক্রিকেটে পঞ্চাশতম সেঞ্চুরির রেশ থাকতেই পরের ম্যাচে আবার তিন অঙ্কের স্বাদ। একই দিনে এনামুল হকের সেই উচ্ছ্বাস আকাশ ছোঁয়ার কথা আরেকটি সুখবরে। তিন বছর পর যে ফিরেছেন বাংলাদেশের টেস্ট দলে! প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন বলছেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে তিন সংস্করণেই রানের ফোয়ারা ছোটানো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সবসময়ই ছিলেন জাতীয় দলের ভাবনায়।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, লিস্ট ‘এ’ কিংবা টি-টোয়েন্টি- ঘরোয়া ক্রিকেটের ২২ গজ যেন এনামুলের আপন আঙিনা। গত এক বছরে তিন সংস্করণেই রানের নহর বইয়ে দিয়েছেন তিনি। চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও দুর্দান্ত ফর্মে ৩২ বছর বয়সী উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।
দুরন্ত পথচলায় এক বছরের বেশি সময় পর জাতীয় দলের দরজা খুলেছে এনামুলের জন্য। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের স্কোয়াডে জাকির হাসানের বদলে সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
গত বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পর বাদ পড়েছিলেন এনামুল। সবশেষ টেস্ট দলে ছিলেন ২০২২ সালের জুনে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে।
গত কয়েক বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটের যে কোনো টুর্নামেন্টে রান সংগ্রাহকদের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকে এনামুলের নাম। সবশেষ জাতীয় ক্রিকেট লিগে ১৩ ইনিংসে ১ সেঞ্চুরি ও ৬ ফিফটিতে তিনি করেছিলেন আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০০ রান।
পরে টি-টোয়েন্টি সংস্করণের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ১২ ইনিংসে ১ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটিতে ৩৯২ রান করেন দুর্বার রাজশাহীর টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান।
একই ফর্ম ধরে রেখে এবার প্রিমিয়ার লিগে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে ১৪ ইনিংসে ৪টি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটি করেছেন এনামুল। এখনও পর্যন্ত তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৭৯.৪৫ গড় ও ৯৭.৪৩ স্ট্রাইক রেটে ৮৭৪ রান। আর কেউ সাতশ রানও করতে পারেননি।
এমন পারফরম্যান্সের পর এনামুলের দলে ফেরা নিয়ে সংশয়ের জায়গা খুব একটা নেই। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সেটিই তুলে ধরলেন প্রধান নির্বাচক।
“(এনামুল) বিজয় সবসময়ই আমাদের প্রক্রিয়ায় ছিল, ভাবনায় ছিল। কোনো ক্রিকেটারকে দলে ফেরানোর জন্য আগে ‘এ’ দলে খেলানোর প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করছিলাম। সেই ধারায় গত বছর পাকিস্তানে ‘এ’ দলের সফরে বিজয় ছিল।”
‘এ’ দলের ওই সফরে অবশ্য ভালো করতে পারেননি এনামুল। বৃষ্টিবিঘ্নিত দুই ম্যাচের তিন ইনিংস মিলিয়ে মোটে ১৮ রান করেন তিনি। এক ইনিংসেও ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক। তবে প্রকৃতির বাগড়ায় উইকেট-কন্ডিশন চ্যালেঞ্জিং থাকায় ওই সিরিজের ব্যর্থতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
বরং ছন্দে থাকা একজনকে দলে পাওয়ায় খুশি প্রধান নির্বাচক।
“আমরা যাদের ওপর ভরসা রাখছিলাম, তাদেরকে বের করে নেওয়ার আগে যেন যথেষ্ট সময় পায় এবং খেলার পরই যেন বাদ দেওয়া হয়, সেই চেষ্টা করছিলাম। শুরুতে তাই এক টেস্টের দল দেওয়া হয়েছে।”
“প্রথম টেস্টে (ওপেনাররা) ব্যর্থ হওয়ায় একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটের সব সংস্করণেই বিজয় ছন্দে আছে। আমরা তো এমনিতে ফর্মের সংকটে ভুগি। ফর্মে থাকা কাউকে সেভাবে পাই না। এবার কিছু ক্রিকেটার ব্যতিক্রম।”
দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে স্বীকৃত ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে সেঞ্চুরির ফিফটি করে ফেলেছেন এনামুল। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দেশের সর্বোচ্চ শতকের পথেই আছেন। এরই মধ্যে ৪৯টি ফিফটির পাশাপাশি করে ফেলেছেন ২৪টি শতক।
ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য প্রায়ই দেখান এনামুল। যা নির্বাচকদেরও নজর কেড়েছে।
“বিজয় এখন খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলছে। টেস্ট ওপেনারের মাঝে যে টেম্পারমেন্ট দেখতে চাই, সেটিও তার মাঝে দেখছি। এই সিরিজ শেষে নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষেও তাকে খেলাব। অনেক দিন সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে। শক্তিশালী কোনো প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলেনি। তাকে দলে ফেরানোর ক্ষেত্রে এটিও একটি কারণ।”
আগামী মাসের শুরুতে তিনটি এক দিনের ও দুটি চার দিনের ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশে আসবে নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দল। এনামুলকে জায়গা দিতে বাদ পড়া জাকিরকেও ওই সিরিজে নেওয়া হবে জানিয়ে রাখলেন গাজী আশরাফ।
“জাকিরকেও নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দলের সঙ্গে দেখা যাবে। কয়টা ম্যাচ খেলাব, সেটা এখন না-ই বললাম। জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার বের হয়ে গেলে সুযোগ পাওয়া উচিত আমরা মনে করি, যদি না তার অনেক বেশি ঘাটতি থাকে।”
“জাকিরের জায়গায়ও নতুন নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী আসতে পারে। তবে জাকির আমাদের নজরের বাইরে চলে যাবে না। লঙ্গার ভার্সনে সুযোগ পাবে। বিসিএলকেও আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মনে করি। যারা দল থেকে বাদ পড়বে বা দলে আসার পথে থাকবে, তারা বিসিএলে কিছু ম্যাচ খেলতে পারবে।”