যানজট নিরসনে পথচারী পারাপারে ফুটব্রিজ ও ফ্লাইওভার এবং আধুনিক গাড়ি পার্কিং লট নির্মাণের কথা বলেছেন নৌকার প্রার্থী।
Published : 21 May 2023, 04:23 PM
গাজীপুর নগরীর যানজট সমস্যা ও জলাবদ্ধতা নিরসনকে প্রাধান্য দিয়ে ২৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আজমত উল্লা খান।
রোববার বেলা ১১টায় শহরের প্রকৌশল ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি।
নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশন থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করার মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এই সিটিকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চান বলে জানিয়েছেন এই প্রার্থী।
তার প্রত্যাশা, নিজের জীবনের নানা অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নগরবাসীদের দেওয়া তার সব ওয়াদা পালন করতে সক্ষম হবেন তিনি।
ইশতেহার অনুযায়ী, মেয়র নির্বাচিত হলে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, ব্রিজসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সেবামূলক খাতগুলোকে আরও শক্তিশালী করে সেবার মানকে সুনিশ্চিত করতে চান তিনি। এজন্য এক, দুই ও পাঁচ বছর মেয়াদী তিন স্তরবিশিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে যাত্রা শুরু হয়েছে, তার সঙ্গে সংগতি রেখে আধুনিক মহানগর ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
যানজটকে নগরীর বড় সমস্যা উল্লেখ করে আজমত উল্লা খান বলেন, “নগরীতে সড়ক সুবিধার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। সড়কের পাশে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা বহুতল ভবনের অধিকাংশেরই নিজস্ব কোনো পার্কিং নেই। ফলে সড়কে যত্রতত্র গাড়ি রাখার কারণে মূল সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।”
এতে মানুষের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে শ্রমঘণ্টা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিপুল অর্থের অপচয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “নগরীর এ জটিল সমস্যা নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ, যানবাহন মালিক, বিআরটিএসহ সড়ক ব্যবহারকারী সবার সঙ্গে বসে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়নে উদ্যোগ দেওয়া হবে।”
এ ছাড়া রেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাগরিকদের রেলে যাতায়াত সহজ করার উদ্যোগও নেবেন তিনি।
মূল শহরের যানজট নিরসনে পথচারীদের পারাপারে ফুটব্রিজ, রেলগেট এলাকায় ফ্লাইওভার এবং আধুনিক গাড়ি পার্কিং লট নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী।
গুরুত্ব বিবেচনায় সড়ক উন্নয়ন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্টজনদের নামে সড়কের নামকরণ, নির্মাণ কাজের গুণগত মান নিরীক্ষার জন্য শক্তিশালী মনিটরিং টিম গঠন করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
আজমত উল্লা খান বলেন, “নগরীর বিপুল জনগোষ্ঠীকে নূন্যতম সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা। সুযোগ পেলে নিজের মেধা-মনন, অভিজ্ঞতা সবকিছু নগরবাসীর জন্য উৎসর্গ করাই আমার আসল অঙ্গীকার।”
নাগরিকদের জন্য হোল্ডিং কর বাড়াবেন না বলেও জানিয়েছেন এই মেয়র প্রার্থী। তিনি বলেন, “হোল্ডিং করের হার না বাড়িয়ে রিভিউ বোর্ডের মাধ্যমে সহনশীল পর্যায়ে চূড়ান্ত করা হবে।”
ইশতেহারে তিনি নগরীর বেদখল হয়ে যাওয়া খাল, নালা, নদী পুনরুদ্ধার ও পানি নিষ্কাশন উপযোগী করতে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “সবার সমন্বিত উদ্যোগে নাগরিকবান্ধব নগর গড়তে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে।”
নগরীর উপযুক্ত স্থানে বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা করে নিয়মিত মশা নিধনের কার্যক্রম গ্রহণের কথাও জানিয়েছেন তিনি।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সিটি করপোরেশনের অন্যতম কাজ উল্লেখ করে এই প্রার্থী বলেন, “মহানগরে প্রতিদিন হাজার হাজার টন বর্জ্য জমছে। যেখানে সেখানে ময়লা ছুঁড়ে ফেলায় সড়কে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। নাগরিক দায়িত্বশীলতা ফিরিয়ে এনে সবার সমন্বিত উদ্যোগে এই কুঅভ্যাস বন্ধ করতে হবে।”
পাশাপাশি রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট নির্মাণের মাধ্যমে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তৈরি করা হবে বলে জানান তিনি। বলেন, অপচনশীল পলিথিন ও প্লাস্টিকের জন্য আলাদা ডাম্পিং ইয়ার্ড করে রিসাইক্লিং প্ল্যান্টে রপ্তানি উপযোগী গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জলাবদ্ধতা ও দূষণ যেন না ছড়ায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর, এনজিও এবং পরিবেশবিদদের সঙ্গে নিয়ে তদারকি কমিটি গঠন করা হবে।
ইশতেহারে গাজীপুরের জন্য বিশ্বমানের মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কথা জানিয়েছেন আজমত উল্লা খান।
অভিজ্ঞ নগরবিদ ও প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে এটি তৈরি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা, হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদসহ বিভিন্ন সনদের ফি, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি অন লাইনের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে।
থাকবে ওয়ার্ডগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নেওয়া এবং ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন তৈরির উদ্যোগও।
সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে তা যথাযথভাবে বিতরণ করার প্রতিশ্রুতিও এসেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর ইশতেহারে।
এ ছাড়া সব নাগরিককে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতাল, স্বল্পমূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের মৃত্যুর পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যসেবা খাতে সমন্বয় করা, দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মহানগরীর শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উঠে এসেছে ইশতেহারে।
সিটি করপোরেশনের অধীনে কারিগরিসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা, নতুন পাঠাগার তৈরি ও পুরোনোগুলো আধুনিকায়নের পরিকল্পনাও আছে এই মেয়র প্রার্থীর।
গাজীপুর শিল্প নগরীরর শ্রমিক-কর্মচারী ও বস্তিবাসীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের অধিকার সংরক্ষণ ও নির্যাতন প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন আজমত উল্লা।
সংবাদকর্মীদের উন্নয়ন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের নানা পরিকল্পনাও উঠে এসেছে তার ইশতেহারে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াজ উদ্দিন, কাজী আলীম উদ্দিন বুদ্দিন, আব্দুল হাদী শামীম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রীনা পারভীন।