ভাইরাসে আক্রান্ত সবাই ঈদের ছুটিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম বা অন্য শহর থেকে কুড়িগ্রামে গিয়ে জ্বরে আক্রান্ত হন।
Published : 09 Jul 2023, 05:24 PM
ঈদের ছুটিতে কুড়িগ্রামে গিয়ে জ্বরে ভোগার পর বেশ কয়েকজনের দেহে ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন রোগটির ছড়িয়ে পড়া রোধে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।
দূরপাল্লার বাস বা অন্য গাড়িতে মশা নিরোধক স্প্রে ব্যবহারের নির্দেশ এসেছে। মশা নিধন ও কীটটির বংশ বিস্তার রোধে পৌরসভাকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশও এসেছে।
রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসনের কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত আসে।
শুরুতে ঢাকা, চট্টগ্রামের মত বড় শহরে থাকলেও ডেঙ্গু এখন মফস্বল শহর এমনকি উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ছে।
উত্তরের জেলায় ঈদের আগেও রোগটির বিস্তার ছিল না। তবে ঈদ শেষে বেশ কয়েকজন জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ডেঙ্গু পজেটিভ ধরা পড়ে। এদের সবাই কর্মসূত্রে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঈদে বাড়ি ফিরেছিলেন।
এখন পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু পজেটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১০ জন। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ডেঙ্গু ইউনিট চালু না থাকায় মেডিসিন ওয়ার্ডের ১০টি শয্যায় ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শহীদুল্ল্যাহ লিংকন বলেন, “গত ১৫ দিনে আমরা ডেঙ্গু রোগী হিসাবে শনাক্ত করেছি ১০ জনকে। তারা এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সাতজন এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। আজ আরও দুজন যাবেন।”
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন সুলতান মিয়া ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা রক্ষীদের ইনচার্জ হিসেবে কাজ করেন। ঈদে কুড়িগ্রাম শহরের চামড়ারগোলা এলাকায় নিজ বাড়িতে আসেন। ১০ দিন আগে তার জ্বর আসে। গত বৃহস্পতিবার ভর্তি হন হাসপাতালে। রোববার ডেঙ্গু পজেটিভ রিপোর্ট আসে।
ঢাকায় চাকরি করা কর্মরত সাইদুর রহমান জ্বর নিয়ে গত বৃহস্পতিবার নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দে আসেন। অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় শনিবার ভর্তি হন কুড়িগ্রাম হাসপাতালে। রোববার তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে।
পৌরসভার নাজিরা মৌজার বাসিন্দা আব্দুল মতিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তিনি চট্টগ্রামে চাকরি করেন। ঈদে বাড়িতে আসার পর জ্বর আসে। হাসপাতাল ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসক জানিয়েছেন, তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
প্রায় এক সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়ে পাঁচদিন আগে বাড়িতে ফিরলেও শরীর খুবই দুর্বল। মাঝে মধ্যে একটু একটু জ্বর এখনও আসে এখনও।
ষষ্ঠ তলার মেডিসিন ওয়ার্ডে দুজন ডেঙ্গু রোগীর সঙ্গে বুক ব্যাথাসহ অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে আরও দুজন রোগী চিকিৎসাধীন আছে। কেউ মশারি ব্যবহার করছেন না। হাসপাতাল থেকেও তা সরবরাহ করা হয়নি আর রোগীর পক্ষ থেকেও আনা হয়নি।
কুড়িগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন মঞ্জুর এ মোর্শেদ বলেন, “জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে বৈঠকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবং ডেঙ্গুর বিস্তার প্রতিরোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এসেছে।
“মশা নিধন ও বংশ বিস্তার রোধে কুড়িগ্রাম পৌরসভাকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন করা হবে। ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা দূরপাল্লার বাস ও যানবাহনে মশা নিরোধ স্প্রে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
মশা নিধনে সোমবার থেকে অভিযান চলবে জানিয়ে কুড়িগ্রাম পৌর মেয়র কাজিউল ইসলাম বলেন, “প্রথম দফায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর আওতায় আসবে। এরপর হাসপাতালসহ সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং মশার উৎপত্তিস্থলে চালানো হবে অভিযান।”