Published : 25 Jan 2024, 08:08 PM
শরীয়তপুর জেলা স্টেডিয়ামে একটি মেলার আয়োজন প্রশাসন বন্ধ করে দিলেও মাঠে রয়ে গেছে অসংখ্য গর্ত; যা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের ধানুকা এলাকায় শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ জেলা স্টেডিয়ামের সামনে ‘প্রাণের শরীয়তপুর’ নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলার খেলোয়াড়, ক্রীড়া সংগঠক, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অংশ নেন।
সম্প্রতি মণিপুরি তাঁতশিল্প জামদানি ও বেনারসি কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে মেলার জন্য স্টেডিয়ামটি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। সোমবার স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে গর্ত করে বাঁশ ও খুঁটি বসিয়ে দোকান বানানো হচ্ছে।
ক্রিকেটের দুটি পিচের পাশে ইট ও লোহা দিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। অনুশীলনের দুটি ক্রিকেট পিচের ওপরও দোকান বসানো হচ্ছে।
খেলার মাঠ নষ্ট করে বিভিন্ন স্থাপনা বসানোর বিষয়টি নজরে আসার পর জেলাজুড়ে সমালোচনার মুখে বুধবার মেলা বন্ধ করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুর রহিম। মাঠের ক্ষতি করে এমন আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকের লোকজন।
মানববন্ধনে প্রাণের শরীয়তপুর সংগঠনের সমন্বয়ক রিয়াদ আহম্মেদ বলেন, “মেলার আয়োজন বন্ধ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মাঠের যে ক্ষতি হল তা কে দেখবে? মাঠ থেকে এখনও মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অস্থায়ী স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়নি; রয়ে গেছে অসংখ্য গর্ত।
“মাঠ সংস্কারের টাকা কোথা থেকে আসবে?। জেলা প্রশাসক এককভাবে মেলার জন্য স্টেডিয়াম ভাড়া দিয়েছিলেন। সংস্কারের দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে।”
শরীয়তপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শাওন ব্যাপারী বলেন, “পড়ালেখার ফাঁকে বন্ধুরা মিলে স্টেডিয়ামে খেলা করি। বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ নিই, অনুশীলন করি। কিন্তু মেলার জন্য মাঠটি এভাবে নষ্ট করবে, তা ভাবতেও পারিনি। আমরা চাই, দ্রুত মাঠ সংস্কার করে খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক।”
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম জানান, ১৯৭৮ সালে ছয় একর জমির ওপর শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়। ১২ হাজার আসনের স্টেডিয়ামটিতে বছর জুড়ে ক্রিকেট, ফুটবলসহ নানা ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অনুর্ধ্ব-১৪, অনুর্ধ্ব-১৬ ও অনুর্ধ্ব-১৮ খেলোয়াড়দের জেলা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন চলে।
বঙ্গবন্ধু টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য গত বছরের জুনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে শরীয়তপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে চার লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু ঈদুল আজহা ও সংসদ নির্বাচনের কারণে ওই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যায় নাই। এ বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ৩২টি দল নিয়ে ৫৬টি ম্যাচের আয়োজন করার কথা থাকলেও স্টেডিয়াম মেলার জন্য ভাড়া দেওয়ায় তা বন্ধ রাখা হয়েছে।
সালাম বলেন, “স্টেডিয়াম মেলার জন্য ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটির সদস্যরা। কোনো সভা করে ক্রীড়া সংস্থার কমিটির মতামতও নেওয়া হয়নি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ একক সিদ্ধান্তে মণিপুরি তাঁতশিল্প জামদানি ও বেনারসি কল্যাণ ফাউন্ডেশনকে স্টেডিয়ামটি দুই মাসের জন্য ভাড়া দিয়ে মেলা বসানোর প্রাথমিক অনুমতি দেন।”
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, “গত বছর মাদারীপুরে এ ধরনের মেলা হয়েছে। এ বছর শরীয়তপুরে হওয়ার কথা ছিল। পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পর আমরা মাসব্যাপী মেলার অনুমোদন দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে নানা কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেলার আয়োজকরা মাঠটি সংস্কার করে দেবে।”
স্টেডিয়ামে মেলার জন্য ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটির সদস্যরা কিছুই জানেন না, এ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে রাজি হন নাই ডিসি।