আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সিলেটের গোয়াইনঘাটে ৮৯৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানায় উপজেলা প্রশাসন।
Published : 21 Feb 2023, 06:38 PM
শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া কন্যাশিশু ‘বন্যা’র বয়স এখন আট মাস। বন্যার মা জয়নুবা বেগম নোয়াগাঁওয়ে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০০ ঘরের একটি পেয়েছেন।
সোমবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণ শ্রমিকদের ধন্যবাদ জানাতে উপজেলা প্রশাসন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমানকে পেয়ে জয়নুবা বেগম আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি ঘর দেওয়ার জন্য ইউএনওকে ধন্যবাদ জানান। তখন ইউএনও শিশু বন্যার খোঁজ-খবর নেন।
এ সময় তাহমিলুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিগত বন্যার সময় পানিতে রাস্তা-ঘাট যখন ডুবে গিয়েছিল তখন আশ্রয়কেন্দ্রে এ শিশুটির জন্ম হয়। আমরা কিভাবে মেডিকেল সাপোর্ট দিতে পারি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার চেষ্টা করছিলাম। তখন নরমাল ডেলিভারি হয় জয়নুবার। শিশুটির নাম রাখা হয়েছিল ‘বন্যা’।
উপজেলার আরেকটি আশ্রয়কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া শিশুর নামও ‘বন্যা’ রাখা হয়েছিল বলে জানান ইউএনও।
তখন পাশ থেকে হেসে জয়নুবা বেগম বলেন, “আমাকে এখন সবাই বন্যার মা বলে ডাকে।“
সরজমিনে নোয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, ১০০টি ঘরের কাজ শেষ, এখন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের আপেক্ষা। এসব ঘরের ২০ থেকে ২৫টি পরিবার চলে এসেছে। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাসিন্দাদের পানির জন্য পাশে খালও কাটা হয়েছে। প্রকল্প এলাকার মাঝখানে শিশুদের খেলাধুলার জন্য রয়েছে মাঠও।
প্রকল্পের মাঠে নির্মাণ শ্রমিকদের ফুল, খাবার ও শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে একটি কম্বল দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়েছে। এমন আয়োজনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শ্রমিকরা।
এই প্রকল্পে কাজ করা বিদ্যুৎ শ্রমিক সাইফুল ইসলাম নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, “অনেক স্থানে কাজ করেছি, তবে এ রকম ফুল দিয়ে কেউ আমাদের ধন্যবাদ জানায়নি।”
পঞ্চাশোর্ধ্ব কাঠমিস্ত্রি হান্নান মিয়া জানান, তিনি অনেক বছর ধরে এ কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। তবে এই প্রথম এ রকম অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে তার ভালো লাগছে।
তিনি বলেন, “আমাদের এভাবে কেউ ফুল, উপহার ও খাবার দিয়ে কাজ শেষে বিদায় দেয় না। সত্যি আজ খুব ভালো লেগেছে।”
নোয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন বৃদ্ধা আলফাতুন নেছা। তিনি জানান, সাতজনের পরিবার তাদের। নিজে দীর্ঘদিন ভিক্ষাবৃত্তি করেছেন। তাদের কোনো বাড়ি-ঘর ছিল না, তারা অন্যের বাড়িতে থাকতেন। এখন এখানে একটি ঘর পেয়ে স্থায়ী একটি ঠিকানা হয়েছে। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য নামাজ পড়ে দোয়া পড়বেন বলে জানান।
শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবক কুতুব উদ্দিনও পেয়েছেন একটি ঘর। তার ভাষ্য, বাড়ি পেয়ে তিনি খুব আনন্দিত। আগে তার কোনো বাড়ি ছিল না, অন্যের বাড়িতে থাকতেন। এত সুন্দর ঘর দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর জন্য তিনি দোয়া করবেন বলে জানান।
প্রকল্পের কাজ চলাকালে কুতুব এখানে ছোট টং দোকান দিয়েছেন। নির্মাণ শ্রমিকরা তার দোকানে চা, পান, বিড়ি ইত্যাদি খেতেন বলে জানান।
গোয়াইনঘাটের ইউএনও তাহমিলুর রহমান বলেন, “মুজিব বর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনায় সারাদেশের মতো গোয়াইঘাটে ৮৯৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব কাজ চলমান রয়েছে। কাজ যাতে ভালো হয় তাই শ্রমিকদের উৎসাহ দিতে এই ধন্যবাদ জ্ঞাপন আনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উনারা অনেক পরিশ্রম করেছেন।
নোয়াগাঁও প্রকল্পটিকে মডেল বা টেকসই গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলতে এখানে ড্রেনেজ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, গভীর নলকূপ স্থাপন এবং ঘরে ঘরে পানি সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান ইউএনও।
তিনি বলেন, এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের তিন পাশে খাল খনন করা হয়েছে, যা এখানকার মানুষের পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কৃষি জমি আবাদে সহায়তা করবে।