অবরোধের কারণে প্রায় লক্ষাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
Published : 09 Nov 2023, 08:25 AM
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিন দফা অবরোধের মধ্যে যানচলাচল বন্ধ হয়ে লোকসানে পড়েছেন খাগড়াছড়ির পেঁপে চাষিরা। ফলে অর্ধেক মূল্যে পেঁপে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক চাষি।
দেশের অন্যতম পেঁপে উৎপাদনকারী জেলা খাগড়াছড়ি। চলতি মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলায় ৫৭১ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই পেঁপে সরবরাহ করা হয়।
অবরোধের কারণে প্রায় লক্ষাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
চাষিরা জানান, স্বাভাবিক সময়ে ৪০ টাকা কেজি দরে পেঁপে বিক্রি হলেও এখন ২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার অনেক মালিক বিক্রি করতে না পারায় বাগানেই পেঁপে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
দীঘিনালা উপজেলার ভৈরফা এলাকার পেঁপে চাষি কৃপাময় চাকমা। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে তিন কানি জমিতে (১২০ শতক) পেঁপে চাষ করেছেন। তাতে খরচ হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে দেড় মাস আগে থেকেই পেঁপে বিক্রি শুরু করেন তিনি।
কৃপাময় বলেন, “এখানকার পেঁপে মূলত ঢাকায় পাঠানো হয়। কয়েকদিন পর পর ৬০০ থেকে ৭০০ কেজি পেঁপে পেতাম। কিন্তু অবরোধের পর আর পাঠাতে পারছি না।
এসব পেঁপে সাধারণত যাত্রীবাহী গাড়ির ছাদে বা বাক্সে করে সরবরাহ করা হয়। এখন বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিক্রি করতে না পেরে পেঁপে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
একই এলাকার কৃষক হাসান আলী বলেন, “পাহাড়ের ঢালু অংশে পেঁপের চাষ করেছি। পেঁপে প্রায় পরিপক্ব হয়ে গেছে। এখন হরতাল-অবরোধ শুরু হয়ে গেছে। এখন পেঁপেগুলো বিক্রি করতে পারছি না। আমাদের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।”
আরেক পেঁপে চাষি রূপায়ণ চাকমা বলেন, “আমাদের বাগানের অবস্থা দেখেন। স্বাভাবিক সময়ে পেঁপে বিক্রি করতাম কেজি প্রতি ৪০ টাকায় আর এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০ টাকায়। অবরোধ তুলে নিলে আমরা কৃষকরা উপকৃত হতাম।”
চাষিরা যাতে নির্বিঘ্নে পেঁপে বিক্রি করতে পারে সেজন্য প্রশাসনের সহায়তা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার।
তিনি বলেন, জেলায় চলতি মৌসুমে ১০ হাজার ৮৬২ মেট্রিক টন পেঁপে উৎপাদিত হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। কৃষক যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা পুষিয়ে উঠা খুব কঠিন। অবরোধের কারণে ২০ থেকে ২৫ টাকায় পেঁপে বিক্রি করছেন কৃষক।
প্রশাসন যদি সহায়তা করে সেক্ষেত্রে চাষিরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য যদি নির্বিঘ্নে পরিবহন করা যায় তাহলে কৃষক লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে সংকট নিরসনে পেঁপেসহ সব ধরনের পণ্যবাহী পরিবহনের জন্য পুলিশি স্কটের ব্যবস্থা করা হবে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান।
তিনি বলেন, “রোববার আমরা বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও পরিবহন সংগঠনের সঙ্গে মিটিং করেছি। এখানে যাতে সাপ্লাই চেইন বিঘ্নিত না হয় সেজন্য পুলিশি স্কটের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”