সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় দেখা যায়, বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন হাজারো মানুষ; বৃষ্টি মাথায় নিয়েই পথে নেমেছেন তারা।
Published : 28 Jun 2023, 02:19 PM
ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশের দৃশ্যে কিছুটা বদল এসেছে। গত দুই দিনের যানজট আর থেমে থেমে চলা গাড়ির সারির সড়ক এখন অনেকটাই ফাঁকা। তবে চাপ রয়েছে ঘরমুখো মানুষের।
বুধবার ভোর থেকে এসব মহাসড়কে যানবাহনের সংকটের পাশাপাশি যারা বাড়ি ফিরতে বের হয়েছেন তাদের জন্য ভোগান্তি নিয়ে এসেছে বৃষ্টি।
সকাল থেকেই সড়কের বিভিন্ন প্রান্তে গাড়ির জন্য অপেক্ষমান যাত্রীদের দেখা মিলেছে। কিন্তু বাস না পেয়ে বিকল্প যান খুঁজতে হচ্ছে তাদের। ট্রাকের ওপর ত্রিপল বা পলিথিন টানিয়ে রওনা হয়েছেন অনেকেই।
সকাল ৯টার দিকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় দেখা যায়, বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন হাজারো মানুষ। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পথে নেমেছেন তারা। কেউ ছাতা নিয়ে, কেউ মাথায় পলিথিন পেঁচিয়ে, কেউবা আবার ভিজতে ভিজতেই রওনা হয়েছেন। তবে বেশি বিপাকে পড়েছেন মোটরসাইকেল, পিকআপ ও গরুর ফিরতি ট্রাকে বাড়ি ফেরা লোকজন।
গ্রামের বাড়ি যশোরের উদ্দেশে বের হয়েছেন সফিপুর বাজারের ঝুট ব্যবসায়ি মো. জাহাঙ্গীর আলম।
যানজটের কথা চিন্তা করে তিনদিন আগেই স্ত্রী-সন্তানদের পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। জানালেন, সকালে বের হয়ে পড়েছেন বৃষ্টির কবলে। এখন পড়েছেন গাড়ির সংকটে। প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো বাসে উঠতে পারেননি। শেষে চন্দ্রা ত্রিমোড় থেকে দেড় হাজার টাকা ভাড়ায় উঠেছেন গরু পরিবহনে ব্যবহৃত খালি ট্রাকে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় বসবাসকারী পোশাক শ্রমিক আবুল বাসার যাবেন রাজশাহী।
চন্দ্রায় গাড়ির অপেক্ষায় থাকা বাসার বলেন, “মঙ্গলবার কারখানা ছুটি হয়েছে। যানজটের কারণে সেদিন বের হইনি। ভেবেছিলাম বুধবার ভোরে বের হব, কিন্তু বৃষ্টির কারণে পারিনি। কিন্তু বৃষ্টি না থামায় শেষ পর্যন্ত পলিথিন ও ছাতা মাথায় দিয়ে বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে বের হয়েছি।
“চন্দ্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছি কিন্তু বাস এলে উঠতে পারছি না। রাস্তা ফাঁকা হলেও যে বাসগুলো আসছে সেগুলোয় সিট খালি নেই।”
ভোগড়ার বাসিন্দা আব্দুল মতিন ও তার স্ত্রী অপেক্ষা করছিলেন গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া এলাকায় যাওয়ার জন্য। বাসে উঠতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আড়াই হাজার টাকা ভাড়ায় অটোরিকশায় চড়ে রওনা হয়েছেন তারা।
তার মতো অনেকেই বিকল্প যান যেমন অটোরিকশা, পিক-আপ, ট্রাক কিংবা কভার্ডভ্যানে গ্রামের পথে রওনা হয়েছেন।
এসব পরিবহনে যাওয়ার জন্য গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
ভোগড়া বাইপাস এলাকায় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কিছু যাত্রী ট্রাক-পিক আপে উঠে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। রংপুরের যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, “পলিথিন মাথায় দিয়েও ৮০০ টাকা ভাড়ায় রংপুর রওনা হচ্ছি। এসব অনিয়ম দেখার কেউ নেই।”
গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “গত বছরের চেয়েও এবার স্বস্তিতে গন্তব্যে যাচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। দুইদিন একটু চাপ বেশি থাকলেও বুধবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যানজট প্রবণ চান্দনা-চৌরাস্তা মোড়, ভোগড়া বাইপাস মোড়, টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় ছিল বছরের অন্য সময়ের চেয়েও স্বাভাবিক অবস্থা।
“তবে বৃষ্টির কারণে বুধবার যারা রওনা হয়েছেন তারা বৃষ্টিতে ভিজে গাড়িতে উঠতে কিছুটা ভোগান্তিতে পড়লেও রাস্তায় কোনো যানজটে পড়তে হয়নি।”
এবার যানজট না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি গুগল ম্যাপের ব্যবহার, সিসি ক্যামেরা ও ড্রোন ব্যবহার করে নজরদারি বাড়িয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং ও গাড়ি জমতে না দেওয়া, কয়েকটি ফ্লাইওভার ব্যবহার এবং রাস্তা প্রশস্ত করার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
বৃষ্টির মধ্যেও নিরলসভাবে কাজ করার কথা জানালেন নাওজোর হাইওয়ে থানার ওসি আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “সকাল থেকে যানজটের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি, তবে বৃষ্টি তাদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে।”
আরও পড়ুন