বুধবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাদেক কাউসার দস্তগীরকে শেরপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
Published : 19 Dec 2024, 11:47 PM
সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত সাংবাদিক এ টি এম তুরাব হত্যা মামলার আসামি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাদেক কাউসার দস্তগীর আদালত প্রাঙ্গণে হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একইদিন ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এক আওয়ামী লীগ নেতাও আদালত চত্বরে হামলার শিকার হয়েছেন। পরে তাকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকালে সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা সাদেক কাউসার দস্তগীরকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আদালত চত্বরে নিয়ে আসা হয়। তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত জনতা তাকে কিল-ঘুষি মারেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড প্রার্থনা করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। শুনানি শেষে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম ও আমলি আদালত-১ এর বিচারক আবদুল মোমেন তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুর রব সাংবাদিকদের জানান।
তবে আদালত প্রাঙ্গণে আসামির ওপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) বি এম আশরাফ উল্যাহ। তিনি বলেন, “অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাউসার দস্তগীরের ওপর কোনো হামালার ঘটনা ঘটেনি। তাকে আদালতে উঠানোর সময় সিলেটের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।”
১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন দৈনিক নয়া দিগন্তের জেলা প্রতিনিধি ও স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদের নিজস্ব প্রতিবেদক সাংবাদিক এ টি এম তুরাব। এ সময় বিক্ষোভ মিছিলে গুলি হয়। গুলিতে তুরাব আহত হন। পরে সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার সময় সাদেক কাউসার দস্তগীর সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের (ক্রাইম উত্তর) দায়িত্বে ছিলেন। পরে তাকে শেরপুর জেলায় বদলি করা হয়। বুধবার বিকালে তাকে শেরপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
এর আগে এই মামলায় সিলেট কোতোয়ালি থানার কনস্টেবল উজ্জ্বল সিংহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছিল পিবিআই।
আদালত চত্বরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাদেক কাউসার দস্তগীরকে আদালতে হাজির করার আগে থেকেই উৎসুক জনতার ভিড় ছিল। বিকাল সোয়া ৫টার দিকে পিবিআই সিলেট কার্যালয় থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সাদেক কাউসার দস্তগীরকে প্রিজন ভ্যানে আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। এ সময় উৎসুক জনতা তার বিরুদ্ধে এবং হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে স্লোগান দিতে থাকেন। তারা সাদেক কাউসার দস্তগীরের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান।
সাদেক কাউসারকে আদালতের তৃতীয় তলায় সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় কিল-ঘুষি মারেন অনেকে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।
আদালতে শুনানি শেষে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তৃতীয় তলা থেকে নিয়ে যাওয়ার সময়ও কিল-ঘুষির শিকার হন সাদেক কাউসার। পরে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে নিরাপত্তার সঙ্গে তাকে ফের পিবিআই সিলেট কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
হামলার শিকার আওয়ামী লীগ নেতা
সিলেটের বালাগঞ্জে ছাত্রদল নেতা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমির হোসেনও আদালত প্রাঙ্গণে মারধরের শিকার হয়েছেন।
বেলা সোয়া ৩টার দিকে আমির হোসেনকে আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে আসেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় লোকজন তাকে মারধর করেন। পরে পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাজতে নিয়ে যান। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে বালাগঞ্জ থানার ওসি মো. ফয়েজ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমির হোসেনকে আদালতে পাঠানো হলে তিনি হামলার শিকার হয়েছেন। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সুস্থ হলে পরবর্তী সময়ে তাকে আবার আদালতে পাঠানো হবে।”
আদালত প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগ নেতার ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) বি এম আশরাফ উল্যাহ বলেন, “উনি একটি হত্যা মামলার আসামি। বালাগঞ্জের মানুষজন আগে থেকে আদালতে উপস্থিতি ছিলেন।
“তবে জেলা পুলিশ আমাদের কিছু জানায়নি; তারা আদালত পুলিশকে অবগত করেনি। এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। হামলার শিকার হওয়া ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”
২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন বালাগঞ্জের ছাত্রদল নেতা সায়েম আহমদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমির হোসেন ওই মামলায় আসামি। বুধবার রাতে সিলেট নগরের মিরের ময়দান এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এর আগে সীমান্তে আটক হওয়ার পর সিলেটের আদালতে তোলার সময় ২৪ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল।