আধুনিক সুবিধা সংযোজন করা হলেও ট্রেনযাত্রার ভাড়া আগের মতো ২০ টাকা রয়েছে।
Published : 26 Mar 2025, 04:34 PM
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ‘মেট্রোর আদলে’ নতুন কমিউটার ট্রেন চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এক হাজারেরও বেশি যাত্রী ধারণক্ষমতার এ ট্রেনটি প্রতিদিন ১৬ বার আসা-যাওয়া করবে।
বুধবার সকাল থেকে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ট্রেনটির যাত্রা শুরু হয়, যাকে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ‘রেলওয়ে বিভাগের উপহার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
চাষাঢ়া স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শামসু মোহাম্মদ খাঁজা সুজন জানান, বেলা ১১টার দিকে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটি নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছাড়ে। পরে বেলা ১১ টা ৪০ মিনিটের দিকে সেটি চাষাঢ়া স্টেশনে পৌছায়।
চাষাঢ়ায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
এই সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার এবং রেলওয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রেল ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, আগে এ রুটে চলাচল করা ট্রেনের বগি ছিল আটটি, যা এখন বাড়িয়ে এগারোটি করা হয়েছে। একযাত্রায় মোট ১ হাজার ১৭৬ জন যাত্রী বহনক্ষমতা সম্পন্ন ট্রেনটি প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৪টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসবে।
নির্দিষ্ট সময় পরপর ১৬ বার যাত্রী পরিবহনের পর সবশেষ রাত ১১টার দিকে ট্রেনটি নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন থেকে ঢাকায় ফিরবে।
নতুন এই কমিউটার ট্রেনের বিশেষ সুবিধার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “এ ট্রেনের বগিগুলোতে ইন্টার-কানেক্টিভিটি রাখা হয়েছে। যাতে যাত্রীরা একটি বগি থেকে আরেক বগিতে সহজেই যাতায়াত করতে পারেন।”
‘নারায়ণগঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা’ উল্লেখ করে এ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করার লক্ষে্য কাজ করছেন বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
চাষাঢ়া স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শামসু মোহাম্মদ খাঁজা সুজন বলেন, “শতাব্দী পুরোনো এ রেলপথে আগে পুরোনো ধাঁচের ট্রেনগুলো চলাচল করত। এখন যাত্রীদের সুবিধার্থে মেট্রো রেলের আদলে নির্মিত নতুন একটি কমিউটার ট্রেনের যাত্রা শুরু হল।
‘মেট্রো রেলের আদলের’ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “এসব কোচের আগের আসনগুলো সরিয়ে দুপাশে নতুনভাবে আসন বসানো হয়েছে। মুখোমুখি আসনে বসার পরও নিরাপদে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও এ ট্রেনে রাখা হয়েছে। দাঁড়িয়ে যাত্রার সুবিধায় স্থাপন করা হয়েছে পর্যাপ্ত স্ট্যান্ড ও পিলার।
”এছাড়া, উন্নত যাত্রীসেবার জন্য কোচে পর্যাপ্ত লাইট ও ফ্যান সংযুক্ত করা হয়েছে। কোচের ফ্লোরে ম্যাট বসানো হয়েছে।”
এছাড়া, আধুনিক সুবিধা সংযোজন করা হলেও ট্রেনযাত্রার ভাড়া আগের মতো ২০ টাকা রয়েছে। তাই সব যাত্রীকে টিকেট কেটে চলাচলের অনুরোধ জানান এ রেল কর্মকর্তা।
স্বস্তি সাধারণ যাত্রীদের
এদিকে আধুনিক যাত্রীসুবিধা-সম্পন্ন এ রেলসেবা চালু করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। তারা ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান ধরে রাখার দাবিও জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের জেলা সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা বলেন, “ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম ট্রেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা নিয়মিতই ট্রেনে যাতায়াত করে থাকেন। আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এ রেলসেবা মানুষের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে বলে মনে করি।”
একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের যাত্রা আরও নিরাপদ করার দিকে মনোযোগ দিতে প্রশাসনের প্রতি তাগিদ দেন এ ছাত্রনেতা।
ঈদের আগে মেট্রোর আদলে নির্মিত এ কমিউটার ট্রেন সাধারণ মানুষের ঈদযাত্রার ভোগান্তি লাঘব করবে বলে মনে করেন গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন।
তিনি বলেন, “ব্যস্ততম এ রুটে মাত্র একটি ট্রেন যুক্ত করা হয়েছে। এ ট্রেনটিই ১৬ বার যাওয়া-আসা করবে। যাত্রাপথে ট্রেনটি বিকল হয়ে পড়লে যাত্রীভোগান্তি বাড়বে। এক্ষেত্রে অন্তত আরেকটি ট্রেন দ্রুত সংযুক্ত করা উচিত।”