১১টি স্থানে তাঁবু গেড়ে দুই দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে।
Published : 17 Feb 2025, 08:11 PM
তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আহুত কর্মসূচিতে উত্তরের পাঁচ জেলায় দিনভর ছিল মানুষের ঢল। ১১টি স্থানে তাঁবু গেড়ে দুই দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে।
‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সোমবার সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেয় ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিস্তা ব্যারাজের নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টের হেলিপ্যাড মাঠে সমবেত হয়েছেন পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ।
বিকাল ৪টায় কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক শুরু হলেও সকাল ১০টা থেকে জেলার ছয় উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে হেলিপ্যাড মাঠে সমবেত হতে থাকেন সাধারণ মানুষসহ বিএনপি ও তার সহযোগী-অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
কর্মসূচিতে আসা রাশেদুল ইসলাম নামের এক কৃষক দাবি করেন, “এক সময় এই তিস্তা নদী ছিল নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও রংপুর জেলার মানুষের জন্য আশীর্বাদ। এখন এই তিস্তা আমাদের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। আমরা এই অভিশাপ থেকে মুক্তি চাই। আর ভিটেবাড়ি, আবাদি জমি হারাতে চাই না।
“বর্ষা মৌসুমে পানির প্রয়োজন হয় না নদীতে। কিন্তু ভারত সরকার ওই সময় পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদের ডুবিয়ে মারে। আর খরা মৌসুমে যখন পানির প্রয়োজন হয় তখন পানি প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম চলছে, এখন নদীতে পানি নাই, ধুধু বালুচরে পরিণত হয়েছে তিস্তা। আমরা তিস্তা পাড়ের মানুষ চাই সরকার দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুক।”
তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, “আমাদের প্রধান দাবি, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করা। এ নিয়ে আমরা আর কোনো কালক্ষেপণ চাই না।”
আরেক অংশগ্রহণকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের যখন পানির প্রয়োজন নেই তখন পানি ছেড়ে দেয় ভারত। আর যখন পানির প্রয়োজন তখন পানি বন্ধ করে রাখে। আমরা এটা চাই না। আমরা চাই চুক্তি অনুযায়ী, পানির ন্যায্য হিস্যা দেবে প্রতিবেশী দেশ ভারত।”
‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ কমিটির আহ্বানে তিস্তা ব্যারেজের পূর্ব-পশ্চিম দুই দিকে দুটি পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
এর মধ্যে পূর্ব দিকে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করছে নীলফামারী জেলা বিএনপি। অপরদিকে পশ্চিম দিকে অবস্থান করছে লালমনিরহাট জেলা বিএনপি। দুটি স্থানেই জড়ো হয়েছেন নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও।
বিকালে লালমনিরহাটে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দুদিনের কর্মসূচি সমাপ্ত হবে।
সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত চলবে এই কর্মসূচি। নীলফামারীর কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এসব মানুষের জন্য থাকা, খাওয়ার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম।
নীলফামারীর অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আ খ ম আলমগীর সরকার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল আলম, সহসভাপতি রাহেদুল ইসলাম দোলন, মাহবুবুর রহমান মাহবুব, মোস্তফা হক প্রধান বাচ্চু, মীর সেলিম ফারুক, মুক্তার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা রঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক শেফাউল জাহাঙ্গীর শেপু, ডিমলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী প্রধান, ডোমার উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেয়াজুল ইসলাম কালু, সাধারণ সম্পাদক সুমন ইসলাম, জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক রেদওয়ানুল হক বাবু, নীলফামারী পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক লুতফুল আলম চৌধুরী শুভ, জেলা যুবদলের সভাপতি এ এইচ এম সাইফুল্লাহ রুবেল, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবু সুফিয়ান রুমেল, সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আযম, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি নুর আলম, সাধারণ সম্পাদক জামিয়ার রহমান।