খবর পেয়ে কোস্টগার্ড ও মৎস্য কার্যালয়ের লোকজন স্থানীয়দের নিয়ে তিমিটি উদ্ধার করে আবার নদীতে ছেড়ে দেন, বলেন বাহিনীটির এক কর্মকর্তা।
Published : 05 Dec 2024, 08:51 PM
নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় মেঘনার তীরে একটি ‘বাচ্চা’ তিমি আটকা পড়ে। পরে প্রাণীটি নদীর গভীরে অবমুক্ত করা হয়।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তমরদ্দি ইউনিয়নের কোরালিয়া নামক স্থানে নদী তীরে তিমিটি আটকা পড়ে।
খবর পেয়ে কোস্টগার্ডের সদস্য, উপজেলা মৎস্য অফিসের লোকজন ও স্থানীয়রা তিমিটি উদ্ধার করে ফের নদীতে ছেড়ে দেন বলে বাহিনীটির হাতিয়া স্টেশনের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার মো. খালিছুর রহমান জানান।
তিনি বলেন, “জেলেরা নদীতীরে তিমিটি কাদায় আটকে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে কোস্টগার্ড সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জেলেদের সহযোগিতায় সেটি টেনে পানিতে নামিয়ে দেন।
“ধারণা করা হচ্ছে, রাতে জোয়ারের সময় প্রাণীটি মেঘনা নদীর তীরে এসে আটকে পড়ে।”
তিনি বলেন, বারবার নদীতে নামিয়ে দেওয়ার পরও তিমিটি পুনরায় তীরে উঠে যাচ্ছিল। পরে প্রাণীটিকে গভীর পানিতে নামিয়ে দেওয়া হয়।
হাতিয়া উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, “তিমিটি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাতিয়ার কোরালিয়া এলাকায় মেঘনার উপকূলে দেখা যায়। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি মৎস্য অফিসকে জানান।
“কোস্টগার্ডের হাতিয়া স্টেশন অফিস ঘটনাস্থল কোরালিয়ার কাছাকাছি হওয়ায় মৎস্য অফিস দ্রুত বিষয়টি কোস্ট গার্ডকে জানায়।
“পরে কোস্ট গার্ড সদস্য এবং মৎস্য অফিসের স্টাফরা স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে তিমি মাছটিকে নদীর দিকে ফেরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু মাছটি দুর্বল হওয়ায় বারবার তীরে ফিরে আসে।”
কোস্টগার্ডের হাতিয়া স্টেশনের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার খালিছুর রহমান বলেন, “তিমিটি সকালে মেঘনা নদীতে ভাটার সময় হাতিয়ার কোরালিয়া ঘাটের বিপরীত দিকে চর আতাউরে আটকা পড়ে। এরপর কিছু জেলে রশি দিয়ে বেঁধে ট্রলারে করে তিমিটিকে নদীর এপাড়ে কোরালিয়া ঘাটে নিয়ে আসেন।
“আমি আমার নিয়মিত টহল শেষ করে আসার সময় তিমিটিকে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পাই। কাছে গিয়ে দেখি, তিমিটিকে ঘিরে উৎসুক লোকজনের ভিড়। পরে মৎস্য বিভাগের ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় কাটাখানি ঘাট বরাবর নদীতে প্রাণীটি অবমুক্ত করে কিছু সময় পাশপাশে ছিলাম।”
আনুমানিক ২০ ফুট লম্বা প্রাণীটি বড় প্রজাতির কোনো তিমির বাচ্চা হবে বলে ধারণা খালিছুর রহমানের।
গভীর সমুদ্রের প্রাণী নদীতে কেন অবমুক্ত করা হল, এমন প্রশ্নের জবাবে কোস্টগার্ডের খালিছুর রহমান বলেন, “এটি কোনোদিক থেকে এসেছে, কোনোদিকে যেতে চাচ্ছে এটা বোঝা মুশকিল। ওদের আসলে একটা ফ্যামেলি থাকে, ওরাতো একা একা চলে না। এজন্য আলাদা করতে চাইনি। কারণ ও আবার ফ্যামেলি থেকে আলাদা হয়ে যায় কিনা। আর ও হয়তো এখানে একা আসছে, অথবা ওর ফ্যামেলির কেউ আশপাশে আছে। দূরে ছাড়লে ফ্যামেলি থেকে ডিটার্চ হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে, তাই ওকে চ্যানেলে পানির গভীরতা বেশি সেখানে অবমুক্ত করা হয়েছে।”
হাতিয়ার মেরিন ফিসারিজ অফিসার মাহমুদুল হাসান বলেন, “১৮ থেকে ২০ ফুট লম্বা তিমিটির ওজন ৪০ মণের মত হবে। স্থানীয় চৌকিদারের জিম্মায় তিমিটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে; এটার যেন কেউ ক্ষতি সাধন না করে। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম, তিমিটি ওখানেই আছে, পানির মধ্যে আছে কিন্তু ওখান থেকে যাচ্ছে না। তিমিটি বেশ দুর্বল, তাই অনেক দূরে নিয়ে গেলে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।”
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ অ্যান্ড মেরিন সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ছবি এবং ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে, এটি তিমির বাচ্চা। বাচ্চাটি সম্ভবত দিক ভুল করে এখানে এসে আটকা পড়ে আর যেতে পারছে না। মানুষ দেখে তিমিটি ভয়ের মধ্যে আছে। তিমি সাধারণ বাচ্চা অবস্থায় মা বাবার সাথে থাকে। গভীর সমুদ্রে ছেড়ে দিলে তিমিটি ফিরে যেতে পারে। এর আগে নোয়াখালী অঞ্চলে জীবিত কোনো তিমি আটকা পড়ার খবর জানা নেই।”
তিমিটি একনজর দেখতে উৎসুক জনতা নদীর তীরে ভিড় জমান। অনেকে কাদাজলে নেমে তিমিটিকে হাত দিয়ে স্পর্শ করেন। কেউ কেউ তিমিটির সঙ্গে ছবিও তোলেন।