ছয় ঘণ্টায় ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ডের তথ্য দিয়েছেন টেকনাফ আবহাওয়া কার্যালয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা।
Published : 19 Jun 2024, 05:02 PM
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় ভারি বর্ষণে অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে; ফলে প্রায় আট হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এদিকে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি-চিংড়ি ঘেরও। প্রাণহানি রোধে বিভিন্ন পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করছে উপজেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার রাত ৯টার পর থেকে কক্সবাজার জেলায় ভারি থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়।
কক্সবাজারের আবহাওয়া কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক তোফায়েল আহমদ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
অন্যদিকে টেকনাফে শুধুমাত্র ছয় ঘণ্টায় ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ডের তথ্য দিয়েছেন টেকনাফ আবহাওয়া কার্যালয়ের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, বুধবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
টেকনাফ শহরের পুরাতন পল্লানপাড়া পাহাড়ের তীরে বসবাসকারী মো. জোবাইর বলেন, “টানা বৃষ্টির কারণে ভয়ে আছি। এ সময়ে নির্ঘুম রাত কাটে। অন্য সময় তেমন একটা ভয় কাজ করে না। তাছাড়া আজ দুপুর থেকে এখান থেকে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।”
বৃষ্টিতে কক্সবাজারের অন্যান্য উপজেলায় এ পর্যন্ত প্লাবিত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া না গেলেও টেকনাফের ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার তথ্য মিলেছে।
এর মধ্যে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের আট, হ্নীলা ইউনিয়নের ১২, টেকনাফ পৌরসভার সাত, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ছয়, সাবরাং ইউনিয়নের আট, বাহারছড়া ইউনিয়নের ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।
জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য বলছে, এতে কমপক্ষে আট হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, তার ইউনিয়নের ১২ গ্রামের চার হাজার বেশি পরিবার পানি বন্দি রয়েছে। এসব গ্রাম হল- জালিয়াপাড়া, সাইটপাড়া, ফুলের ডেইল, আলী আকবর পাড়া, রঙ্গিখালী লামার পাড়া, আলীখালি, চৌধুরী পাড়া, পূর্ব পানখালী, মৌলভীবাজার লামার পাড়া, ওয়াব্রাং, সুলিশ পাড়া ও পূর্ব সিকদার পাড়া।
“এসব গ্রামের চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে দেড় হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। খাল দখলের কারণে বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় তাদের বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, কলেজপাড়া, শীলবুনিয়া পাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, খানকারডেইল, চৌধুরীপাড়া ও কেকে পাড়া প্লাবিত হয়েছে।
তিনি বলেন, এই সাত গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি। পানিতে ডুবে আছে টেকনাফ কলেজসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। পৌরসভার ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু ঘরবাড়িসহ চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ ছাড়া এসব এলাকায় মাছের ঘেরসহ লবণের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, সদরের ছয় গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এগুলো হল- মহেশখালীয়া পাড়া, তুলাতুলি, লেঙ্গুরবিল, খোনকারপাড়া, মাঠপাড়া ও রাজারছড়া।
সবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোছাইন বলেন, শাহপরীর দ্বীপের সাত গ্রামসহ সাবরাং ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
হোয়াইক্ষং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ আনোয়ারী বলেন, লম্বা বিল, উলুবনিয়া, আমতলি, মিনাবাজার, উনচিপ্রাং, কাঞ্চনপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া ও রইক্ষ্যং গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে উনচিপ্রাং এলাকার একটি রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বসতবাড়িতে এক ফুট পানি উঠেছে।
“অতিবৃষ্টির ফলে প্রায় পাঁচশ ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এ সময় অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। আমি এসব এলাকা পরিদর্শন করেছি।”
বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন বলেন, তার ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের কমবেশি পানি ওঠেছে। এতে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে ১০ গ্রাম। এতে এক হাজার পরিবার খুব খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, “ভারি বর্ষণের ফলে কিছু গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আমরা তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনা খাবার দেওয়া হবে।
“পাশাপাশি অতি ভারি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সকাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের অন্যত্রে সরে যেতে বলা হচ্ছে। এ জন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”