ফরিদপুরে দুই দিন আগে রাতে ওই শিক্ষার্থীকে মারপিটের ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে করেছে পরিবার।
Published : 09 Dec 2024, 10:53 PM
ফরিদপুর সদর উপজেলায় ওয়াজ শুনতে যাওয়ার পথে এক স্কুলছাত্রকে ধরে নিয়ে মারপিটের পর মাটি খুঁড়ে জ্যান্ত পুঁতে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে সোমবার শহরের আলীপুরে একটি সংবাদপত্রের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করেন ওই ছাত্রের পরিবার।
ভুক্তভোগী ১৩ বছর বয়সি জিহাদ মাতুব্বর সদরের বড় মাধবপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মোস্তাক মাতুব্বরের ছেলে। সে কানাইপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।
ঘটনার পরদিন রোববার রাতে ওই ছাত্রের বাবা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন বলে জানান কোতোয়ালি থানার ওসি আসাদউজ্জামান।
মামলায় একই এলাকার সিফাত (২৪), মাসুম (২৩), মারুফ (২০), আরাফাত (২০), সজল (২২), সাকিলসহ (১৯) অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাক মাতুব্বর অভিযোগ করে বলেন, “শনিবার রাতে জিহাদ পাশের গ্রামে ওয়াজ শুনতে যাওয়ার পথে এলাকার বখাটেরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। তাকে বেধড়ক মারপিটের পর একটি কবরস্থানে নিয়ে মাটি খুঁড়ে জ্যান্ত পুঁতে হত্যাচেষ্টা করা হয়। পরে তারা জিহাদকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলে।”
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, কয়েক তরুণ জিহাদকে মারতে মারতে জামার কলার ধরে টেনে একটি কবরস্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে নিয়ে আবার তাকে মারা হয়। এ সময় এক তরুণকে কোদাল দিয়ে গর্ত খুঁড়তে দেখা যায়।
জিহাদকে ওই যুবক বলেন, “তোরে জবাই করব না, জ্যান্তই পুঁইত্যা ফ্যালাব। কোহনে কোহনে ক? জায়গা পছন্দ কর।” তখন তাদের একজনকে কবর খুঁড়তে খুঁড়তে হাহা করে হাসিতে ফেটে পড়তে দেখা যায়।
এরপর কেউ একজন সেখানে এক যুবককে ফোন ধরিয়ে দেওয়ার পরে তাদের মাঝে কথাবার্তা হয়। এর কিছুক্ষণ পর যুবকটি জিহাদকে ছেড়ে দিয়ে বলেন, “বাইচ্যা গেলি আইজক্যার মত। আর কবি ক?” তারপর তাকে সজোরে কিলঘুষি মারতে থাকেন তারা।
জিহাদের মা মারিয়া আকতার বলেন, “বাড়িতে পৌঁছে জিহাদ বমি করে। রাতেই তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই। প্রচণ্ড ভয়ে তার পিত্তি গলে যাওয়ার দশা। এখনও সেই ভয়ংকর স্মৃতির ট্রমায় আক্রান্ত হয়ে রয়েছে আমার ছেলে।”
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী জিহাদ বলে, “কদিন আগে চাচাতো ভাইদের বাড়ির পেছনে নদীর পাড়ে জড়ো হয়ে শোরগোল করতে থাকা একদল বখাটের কাছে, উঁচু স্বরে জানতে চেয়েছিলাম তারা কারা। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় প্রথমে একদফা আমাকে মারপিট করে তারা।
“শনিবার রাতে বাবার কাছ থেকে হালিম খাওয়ার জন্য টাকা নিয়ে ওয়াজের মাঠে যাচ্ছিলাম। তখন ওই যুবকেরা আমাকে দিয়ে দোকান থেকে সিগারেট কিনে আনতে বলে, আর তারপর সিগারেট কেনার ভিডিও করে। বাবাকে সিগারেট কেনার ভিডিও দেখিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে নেয়।”
এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
ওসি আসাদউজ্জামান বলেন, অভিযোগটি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ একাধিক অভিযানও চালিয়েছে।
দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।