মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে নারায়ণগঞ্জে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বিক্ষোভ

বিক্ষোভের মধ্যে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী তাদের সঙ্গে কথা বলেন; এরপর তারা কর্মসূচি শেষ করে চলে যান।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2023, 06:51 PM
Updated : 14 March 2023, 06:51 PM

দৈনিক মজুরি ও উৎসব ভাতা বৃদ্ধিসহ ছয় দফা দাবিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন৷

মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নগরভবনের সামনে তারা বিক্ষোভ করেন।

বিক্ষোভ চলাকালে নগরভবনের সামনে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয় এবং সিটি করপোরেশনের এক পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তার উপরও চড়াও হতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের৷

যদিও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সংগঠন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কিশোর লালের দাবি, নগরভবনের সামনে তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছেন৷ ময়লা ফেলা কিংবা কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হবার মতো ঘটনায় তারা কেউ জড়িত নন৷

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কেউ ময়লা ফেলেনি৷ আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য কেউ এই কাণ্ড ঘটিয়েছে৷ আমরা আমাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়েছি৷ আমাদের দাবি, আমাদের চাকরি স্থায়ী করে দৈনিক মজুরি ৭৫০ টাকা করতে হবে৷”

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ১১৫০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী তালিকাভুক্ত থাকলেও এ আন্দোলনে ৪০-৫০ জনকে দেখা গেছে৷ তবে অন্য কর্মীরাও এ আন্দোলনে একাত্ম বলে দাবি নেতাদের৷

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভ চলাকালে দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী নগরভবন থেকে নিচে নেমে আসেন৷

তিনি পরিচ্ছন্নকর্মীদের বলেন, সারা বাংলাদেশে কোনো সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্থায়ী করা হয়নি৷ আর সিটি করপোরেশন গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ বাজেট সংকটের কারণে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না৷

নগরভবনের সামনে ময়লা ফেলে রাখায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নেতাদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, দাবি আদায়ের বিক্ষোভ করবেন ঠিক আছে৷ আপনাদের দাবির বিষয়ে আলোচনা হবে৷ তাছাড়া বেতন বাড়ানোও হয়েছে আপনাদের৷ কিন্তু ময়লা ফেলে রাখা আপনাদের ঠিক হয়নি৷

এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা৷ সিটি করপোরেশন পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন আগেই বৃদ্ধি করেছে বলে জানিয়েছে৷

“মেয়র মহোদয় নিজে বিক্ষোভকারীদের সাথে কথা বলে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে আশ্বস্ত করলে তারা বিক্ষোভ শেষ করে নগরভবন ছাড়েন৷”

এ বিষয়ে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি৷

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় মাসিক সভায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।

সিদ্ধান্তের কথা জানার পরও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের প্রভাবিত করে আন্দোলনে নামানো হয়েছে বলে মন্তব্য এ কর্মকর্তার৷

তিনি আরও বলেন, কোনো সিটি করপোরেশনেই পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের চাকরি স্থায়ী না৷ পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কাজও করেন সকালে ১-২ ঘণ্টা৷ একাধিক জায়গায় চাকরি করেন কিংবা পরিবারের সকলের নাম তালিকায় আছে কিন্তু কাজ করেন একজন, এমনও ব্যাপার আছে৷ তারপরও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য স্কুল, বসবাসের জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য নির্মিত হচ্ছে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন এলাকায় বহুতল ভবন।

এর আগে সোমবার বিকালে নগরীতে বিক্ষোভ করেন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা৷ তাদের নেতৃত্ব দেন স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা৷ ওইদিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা৷

স্মারকলিপিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন।

তাদের দাবিগুলো হলো বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ মোতাবেক শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান করতে হবে; নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কর্মরত সব পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চাকরি স্থায়ী করতে হবে; সব পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নূন্যতম দৈনিক হাজিরা ৭৫০ টাকা ও ট্রাক শ্রমিকদের ৮৫০ টাকা করতে হবে; প্রত্যেক শ্রমিকের বেতন সমপরিমাণ ঈদ বা পূজার বোনাস প্রদান করতে হবে; প্রতি ওয়ার্ডে ২ জন করে ডোম নিয়োগ দিতে হবে; নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার সময় যদি কোনো শ্রমিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে তাহলে আইএলও কনভেনশন আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে এবং সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর অঞ্চলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের স্থায়ী বসবাসের জন্য বহুতল ভবন বাসস্থান তৈরি করতে হবে।