‘বম পার্টির হুমকি’, রুমা ও থানচির পথে বাস বন্ধ

“সকালে কেএনএফ পরিচয় দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ রাখার জন্য হুমকি দেওয়া হয়।“

বান্দরবান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2024, 08:52 AM
Updated : 18 Feb 2024, 08:52 AM

পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফের ‘হুমকির’ ঘটনায় বান্দরবান সদর থেকে রুমা ও থানচির পথে বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।

পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, রোববার সকালে দুই উপজেলার বাস কাউন্টারের লাইনম্যানদের ফোন করে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়।

এ অবস্থায় সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে সমঝোতার চেষ্টা চলেছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি রুমা উপজেলার রিজুক ঝরনা পাড়ার এক যুবককে গুলি করার অভিযোগ ওঠে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত কেএনএফের বিরুদ্ধে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই যুবককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পরদিন রুমা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন স্থানীয়রা। সেখানে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানকেও দেখা যায়।

যোগাযোগ করা হলে থানচি উপজেলায় বাস কাউন্টারের লাইনম্যান মংসিনু মারমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে কেএনএফ পরিচয় দিয়ে ফোন করে বাস বন্ধ রাখতে বলা হয়। কেউ গাড়ি চালালে পরিণতি ভালো হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়।

“তারা বলছে, শুধু বাস নয়, থানচি-বান্দরবান সড়কে কোনো মোটরসাইকেল পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে না।”

মংসিনু মারমা বলেন, “তারা (কেএনএফ) আজকে সকালে প্রথম বাস ছাড়ার মুহূর্তে হঠাৎ ফোন করে বলে, আমাদের রুমা উপজেলার তিন চেয়ারম্যানকে দরকার। রুমা সদর ইউপি চেয়ারম্যান, পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান ও রুমা উপজেলা চেয়ারম্যানদের পেলে তখন সব গাড়ি চলাচল করতে পারবে। এখন আমরাও বাড়ি যেতে পর্যন্ত ভয় পাচ্ছি। সকালে রুমা বাস কাউন্টারে আমাদের এক লাইনম্যানকেও মারধর করেছে তারা।”

থানচি বাস স্টেশনের গাড়ি চালক মোহামম্দ নুর আলম বলেন, “সকালে ৭টায় আমার গাড়িই প্রথম ট্রিপ ছিল। সব যাত্রী গাড়িতে উঠে গেছে। প্রথম ট্রিপ হিসেবে যাত্রীও ভরা ছিল। গাড়ি ছাড়ব ওই সময় লাইনম্যান ফোন করে বললো, গাড়ি ছাড়া যাবে না। কেএনএফ গাড়ি না ছাড়ার জন্য হুমকি দিয়েছে।

“লাইনম্যানের মাধ্যমে আমরা তাদের অনুরোধ করছিলাম, যেহেতু যাত্রীরা এসে গেছে। গাড়িতেও উঠে গেছে। প্রথম ট্রিপ হিসেবে একবার যাত্রী নিয়ে চলে যায়। কোনো কাজ হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টেশনে সাইড করে রাখলাম।”

রুমা-বান্দরবান রুটে হুমকির খবর পেয়ে অনেকে মোটরসাইকেল চালানোও বন্ধ করে দিয়েছেন। জরুরি প্রয়োজনে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মোটরসাইকেল বান্দরবান এবং চিম্বুক ১২ মাইল এলাকা থেকে রুমা সদরঘাট এলাকা পর্যন্ত চলাচল করতে দেখা গেছে। কিন্তু পর্যটকবাহী কোনো গাড়ি চলছে না।

বান্দরবান শহরের রুমা ও থানচি বাস স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, হঠাৎ করে বাস চলাচল বন্ধে ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। স্টেশনে শিডিউল অনুযায়ী ছেড়ে দেওয়ার জন্য বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু বাসে কোনো চালক বা সহকারী নেই।

যাত্রীরা স্টেশনে এসে বাস চলাচল বন্ধের খবর পেয়ে চলে যাচ্ছেন। বেশিরভাগ যাত্রীরাই স্থানীয়। কোনো পর্যটককে দেখা যায়নি বাস কাউন্টারে।

বান্দরবান শহরে থানচি বাস কাউন্টারে থুইমাচিং মারমা (৬০) নামে এক যাত্রী বলেন, “মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে থানচি যাওয়ার জন্য সকাল সকাল বের হয়েছি। এসে শুনি বাস যাবে না। আবার হুট করে ছেড়ে দেয় কিনা এই আশায় আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখব।”

প্রদীপ তঞ্চঙ্গ্যা নামের আরেক যাত্রী বলেন, “প্রথম অথবা দ্বিতীয় ট্রিপ বাস ধরার জন্য একটু তাড়াতাড়ি বের হয়েছি। এসে শুনলাম বাস চলাচল নাকি বন্ধ। জরুরি প্রয়োজন মোটরসাইকেল ভাড়া করে হলেও যেতে হবে। কিন্তু ভাড়া বেশি গুনতে হবে। এক থেকে দেড় হাজার দেওয়া লাগবে। তাও মোটরসাইকেল যদি যায়।”

গাড়ি চলাচল বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে রুমার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, “রুমা প্রশাসনের উদ্যোগে সকল পক্ষকে নিয়ে, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, বম সোশ্যাল কাউন্সিল ও মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিংয়ে বসছি। আশা করি, সমঝোতা হলে শিগগির গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হবে।”

থানচির উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে পরিবহন শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধের বিষয়টি জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়েছে।”

রুমা থানার ওসি মোহাম্মদ শাজাহান বলেন, “প্রাইভেট গাড়িগুলো চলাচল করছে। ভয়ে নিজেরাই পাবলিক পরিবহন বন্ধ করে রেখেছে। লাইনম্যানকে মারধর করার কথা শুনেছি কিন্তু এখনো কেউ থানায় এসে অভিযোগ জানাননি।”

উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যান চলাচল স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে থানচি থানার ওসি মো.জসিম উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।