রেললাইনে আগুন, দিনভর ভাঙচুরে বহিরাগতরা; সন্দেহ রাবি উপাচার্যের

“ক্যাম্পাসে কিছু অবিবেচ্য ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো মোটেও শিক্ষার্থীরা ঘটিয়েছে বলে আমি মনে করি না; এরা দুষ্কৃতকারী হবে।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2023, 01:42 PM
Updated : 13 March 2023, 01:42 PM

স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ-হামলার রেশ ধরে পরদিন দিনের বেলায় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে হামলা-ভাঙচুর এবং সন্ধ্যার পর রেললাইনে অগ্নিসংযোগ, চারুকলার অঙ্গনে থাকা রেপ্লিকা-ভাস্কর্য পোড়ানোর ঘটনায় বহিরাগতরা জড়িত বলে ধারণা করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। 

সোমবার উপাচার্যের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলেনে এ কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।  

রোববারের ঘটনা তুলে ধরে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার কাছে তথ্য আছে যে, গতকাল (রোববার) আন্দোলনে শুরুর দিকে সাধারণ শিক্ষার্থী থাকলেও পরে আর তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো না। বহিরাগতরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছিলো। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। 

“হ্যাঁ, আমাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে কিছু সমস্যা হতেই পারে। এবং সেগুলো আমরা সমাধানও করতে পারি। কিন্ত এবারের ঘটনায় এ ধরনের সহিংসতায়, অগ্নি-সংযোগ, লুটপাটে বহিরাগতরা জড়িত বলে আমার মনে হয়। কেননা, তাদের সেক্ষেত্রে সে অর্থে কোনো শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়নি।” 

বাসের যাত্রী একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের ভাড়া ও সিটে বাস নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেইট সংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষের সূচনা হয়। চার ঘণ্টা থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গোটা এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেইটের পাশে সীমানা প্রাচীর লাগোয়া বেশ কয়েকটি দোকানপাটে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিছু দোকানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেওয়া হয়েছে বিনোদপুর গেইট সংলগ্ন পুলিশ বক্সেও। সেখানে পুলিশের একটিসহ মোট মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে আহত হয় দুই শতাধিক।

Also Read: মঙ্গলবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

এর জের ধরে পরদিন রোববার শিক্ষার্থীরা প্রায় দুই ঘণ্টা উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারকে সিনেট ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী তাকে বাসভবনে নিয়ে যায়। সেখানে শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।

এর আগে ভিসি ‘সাবাস বাংলাদেশ’ পাদদেশে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে শিক্ষার্থীরা ভিসিকে বিনোদপুর গেইট এলাকায় যেতে বলেন। কিন্তু সব শিক্ষার্থী সেখানে গেলে ফের পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এই আশঙ্কায় তিনি শিক্ষার্থীদের প্রস্তাব নাকচ করে দেন।

এ সময় কিছু শিক্ষার্থীকে মাঠ ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইটে গিয়ে ভাঙচুর করতে দেখা যায়। দুপুরের পরও কয়েকজনকে সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে। দুপুরের পর থেকে সারাদিন কয়েকজনকে সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে। তারা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। সন্ধ্যার দিকে সংখ্যায় বেড়ে তারা চারুকলার দিকে চলে আসেন। 

তার কিছু পরেই ক্যাম্পাসের পাশে রেললাইনে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় কিছু শিক্ষার্থী চারুকলা অনুষদের আঙ্গনে থাকা কাঠের ভাস্কর্য, শোভাযাত্রার বড় রেপ্লিকা এনে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। কয়েকজনকে রেলের স্লিপারও তোলার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। 

এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। 

এই পরিপ্রেক্ষিতেই দুপুর দেড়টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। 

‘তুচ্ছ ঘটনাকে’ কেন্দ্র করে শনিবারের সন্ধ্যায় ঘটনার সূত্রপাত উল্লেখ করে অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, “এখানে সবচেয়ে বড় আশঙ্কার একটা জায়গা ছিল যে, বারবার আমি শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম, এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় আমরা সমাধান করবো। কিন্ত স্থানীয় কিছু উচ্ছৃঙ্খল অধিবাসীদের সঙ্গে আমাদের শিক্ষার্থীদের এ ধরনের ঘটনা ঘটায় পরিস্থিতিটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।” 

“তারপরও গতকাল (রোববার) ক্যাম্পাসে কিছু অবিবেচ্য ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো মোটেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘটিয়েছে বলে আমি মনে করি না; এরা দুষ্কৃতকারী হবে। 

তিনি আরও বলেন, “কারণ, আমরা মোটেও চাই না যে, আমাদের ছেলেরা রাস্তা অবরোধ করবে, আগুন দেবে। এগুলো যারা করেছে প্রশাসন সেগুলো জানে, তারা তাদের মতো ব্যবস্থা নেবে।” 

রোববার সিনেট ভবনে অবরুদ্ধ থাকার সময় সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেন উপাচার্য। 

তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের কিছু দাবি-দাওয়া ছিলো, ক্রমান্বয়ে আমরা সেগুলো পূরণের চেষ্টা করছি। সেগুলোর মধ্যে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের দৌরাত্ম কমানোর বিষয়টি এসেছে। এটি নিয়ে আজ থেকেই আমরা কঠোর অবস্থানে যাচ্ছি। সন্ধ্যার পরে কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারবে না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইডি কার্ড নিয়ে চলাফেরার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

এ ছাড়া মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে মেস মালিক সমিতির সভাপতি, এলাকার গণ্যমান্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ বসবে বলে জানান অধ্যাপক গোলাম সাব্বির। 

তিনি বলেন, “কেননা আমরা চাই, স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটা পরিপূরক সম্পর্ক গড়ে উঠুক।” 

এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরও জানান, ঘটনা তদন্তে যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল তাতে আরও দুজন সদস্যকে যুক্ত করা হয়েছে। এখন কমিটির সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। 

আরও পড়ুন:

রাবিতে সংঘর্ষ: ৩০০ জনের বিরুদ্ধে এবার পুলিশের মামলা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি 

ছাত্রলীগের সহায়তায় ২ ঘণ্টা পর মুক্ত রাবি ভিসি, বিক্ষোভ অব্যাহত

সংঘর্ষে আহত ৯২ রাবি শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি, আইসিইউতে ১

উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান রাবি শিক্ষার্থীদের, তালা প্রশাসন ভবনে

রাবি থমথমে, মহাসড়ক বন্ধ

সংঘর্ষ-হামলা-আগুনে রণক্ষেত্র রাবি এলাকায় বিজিবির টহল, ক্যাম্পাসে উত্তেজনা

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ: রাজশাহী মেডিকেলে আহত দেড় শতাধিক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সংঘর্ষ-আগুনের পর বিজিবি মোতায়েন

স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত

রাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ, পুলিশ বক্স-দোকানপাটে আগুন