এক শিক্ষিকার কাছ থেকে আরেকজনের মাধ্যমে ঘুষের ২৮ হাজার টাকার চেক নেওয়ার লিখিত অভিযোগ করেছেন তার স্বামী।
Published : 31 Oct 2023, 08:55 PM
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক শিক্ষিকার কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে; ঘটনার তদন্তে গঠন করা হয়েছে কমিটি।
এ নিয়ে ওই শিক্ষিকার স্বামী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলেও তা অস্বীকার করেছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম।
এদিকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তালেব।
রাঙামাটি জেলা থেকে চলতি বছরের জুনে আব্দুস সালাম শাল্লা উপজেলায় যোগদান করেন। তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত প্রকল্পসহ বিভিন্নভাবে শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এরমধ্যে তার ঘুষ চাওয়ার দুটি অডিও ফাঁস হয়েছে বলে উপজেলার কয়েকজন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি করেছেন।
সবশেষ শিক্ষিকার কাছ থেকে অন্যজনের মাধ্যমে ঘুষের ২৮ হাজার টাকার চেক নেওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার শাল্লা ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষিকার স্বামী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, “উপজেলার শাসখাই গ্রামের তন্ময় দেবের স্ত্রী অঞ্জলি রানী দাস আগুয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক। ১৪ সেপ্টেম্বর অঞ্জলি রানী অসুস্থ হলে চিকিৎসক তাকে কিছুদিন (৫ অক্টোবর পর্যন্ত) বিশ্রামে থাকার ব্যবস্থাপত্র দেন।
“ছুটি শেষে ৬ ও ৭ অক্টোবর সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ৮ অক্টোবর তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এসময় সনাতন ধর্মাবলম্বী সরকারি চাকরিজীবীদের বোনাসসহ বেতন-ভাতা দেওয়া হলেও অঞ্জলি রানীর বেতন ও বোনাস আটকে দেওয়া হয়।
“এ নিয়ে অঞ্জলি রানী শিক্ষা অফিসের এক কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাকে শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে বলেন। পরে অঞ্জলি রানী মোবাইল ফোনে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঢাকায় আছেন বলে জানান। ঢাকা থেকে ফিরে এ বিষয়ে কথা বলবেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, “ওই শিক্ষা কর্মকর্তা ঢাকা থেকে ফেরার পর ১৭ অক্টোবর অঞ্জলি রানী তার সঙ্গে দেখা করেন। সে সময় শিক্ষা কর্মকর্তা ওই শিক্ষিকার ছুটির জটিলতাকে পুঁজি করে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।
“এ সময় শিক্ষা কর্মকর্তা সালামকে ওই শিক্ষিকা জানান, তিনি ঋণ করে চিকিৎসা করিয়েছেন। তার কাছে টাকা-পয়সা নেই এবং তিনি এত টাকা ঘুষ দিতে পারবেন না। এক পর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে বিভাগীয় শাস্তির ভয় দেখান। এমনকি টাকা না থাকলে শিক্ষা কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ উজ্জ্বল মিয়ার কাছ থেকে সুদে ঋণ নিয়ে একটি চেক দেওয়ার নির্দেশ দেন।”
অভিযোগকারী তন্ময় দেব বলেন, “শিক্ষা কর্মকর্তা সালাম শিক্ষকদের দুর্বলতা খুঁজে খুঁজে তাদেরকে জিম্মি করে ঘুষ নেন। আমার স্ত্রীর বৈধ অসুস্থতার ছুটিতেও জটিলতা সৃষ্টি করে তিনি পছন্দের লোককে দিয়ে ২৮ হাজার টাকার একটি চেক নিয়েছেন।
“আমি তার এই অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।”
এ বিষয়ে জানতে চেক গ্রহণকারী উজ্জ্বল মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, “আমি ঢাকায় আছি। আমি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেইনি।”
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহন লাল রায় বলেন, “এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে আমার কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ পেলে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।”
শাল্লার ইউএনও আবু তালেব বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলাউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্লিপ ও ক্ষুদ্র মেরামত প্রকল্পের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ায় আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও।