জয়পুরহাটে হিমাগারে আলু তোলার জন্য বস্তা প্রতি ৭০ থেকে ১৫০ টাকা করে নেওয়া অভিযোগ করেছেন চাষিরা।
Published : 18 Mar 2025, 02:53 PM
জয়পুরহাটের হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র চাষিরা। হিমাগারে আলু ঢোকাতে বস্তা প্রতি তাদের কাছ থেকে ৭০ থেকে ১৫০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তাদের অভিযোগ দেওয়া হলেও তারা দৃশ্যমান কোনও পক্ষের নিচ্ছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চাষিরা।
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভীন।
জেলার পাঁচবিবি উপজেলার চানপাড়া এলাকার সাথী হিমাগারে গিয়ে দেখা গেছে, হিমাগার বন্ধ, তবে প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় আলুবোঝাই ভ্যান, ভটভটি, ট্রাক্টর, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনের দীর্ঘ সারি। চাষিরা অপেক্ষা করছেন, কখন তাদের আলু ভেতরে ঢোকানো হবে।
তাদের অভিযোগ, ২ থেকে ৩ মাস আগে বুকিংয়ের রশিদ কাটলেও নেওয়া হচ্ছে না তাদের আলু। আর যদিওবা নেওয়া হচ্ছে, তার বিপরীতে এক প্রকার জোর করে বস্তা প্রতি ৭০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। আর টাকা না দিলে আলুর বস্তা নিজেরাই পিঠে করে তুলতে হবে হিমাগারের উঁচু তলায়।
তবে নিয়ম হল, কেবল হিমাগারের সেড পর্যন্ত আলুর বস্তা পৌঁছানোর দায়িত্ব সংরক্ষণকারীদের। এ অবস্থায় বিড়ম্বনা আর হয়রানির শিকার হচ্ছেন চাষিরা।
পাঁচবিবি উপজেলার আওলাই ইউনিয়নের আলু চাষি সুনীল চন্দ্র বলেন, “কোল্ডস্টোরে ২৫ বস্তা আলু রাখার জন্য তিন মাস আগে বুকিং করেছিলাম। কিন্তু ১৮ ঘণ্টা এই রোদের মধ্যে ভটভটিতে করে আলু আনার পর জানলাম হিমাগারের লোকেরা আলু নিবে না। আবার বলে বস্তা প্রতি ৮০ টাকা করে দিলে আলু নিবে।”
তার মত বিড়ম্বনায় পড়েছেন সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর বাজার এলাকার ইমরান, পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা গ্রামের হাফিজুর রহমান, পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া বাজারের সিদ্দিক হোসেনসহ অপেক্ষমাণ আলু চাষিরা।
তারা জানান, হিমাগারের বাইরের সেড পর্যন্ত সংরক্ষণকারীদের বস্তা ভর্তি আলু পৌঁছাতে হবে। এরপর কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব কুলি বা শ্রমিক দিয়ে সেখান থেকে বস্তা হিমাগারে ওঠাবেন। এ ক্ষেত্রে হিমাগার মালিকপক্ষ প্রতিবস্তা আলুর জন্য শ্রমিকদের ১৮ থেকে ২১ টাকা করে দিবেন।
কিন্তু এ কাজে নিয়োজিত হিমাগারের শ্রমিকরা, সেই টাকা আত্মসাৎ করার জন্য আলু সংরক্ষণ করতে আসা গরীব কৃষকদের ওপড় চাপিয়ে দিচ্ছেন। তারা বস্তা প্রতি ৭০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। আর টাকা না দিলে যার আলু তাকেই হিমাগারে তুলে দিতে হবে।
তাই বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক তাদের আলু হিমাগারের ৩ থেকে ৪ তলায় তুলে দিচ্ছেন। আর যারা পারছেন না, তারা টাকাই দিয়ে আলু হিমাগারে তুলতে বাধ্য হচ্ছেন। আর যাদের শক্তি, টাকা কোনোটাই নাই তারা বাধ্য হয়ে আলু নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সাথী হিমাগারের ব্যবস্থাপক শামসুল হক বলেন, এ বছর অধিক ফলনের কারণে আলু সংরক্ষণে হিমাগারে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অসুবিধা হচ্ছে। এর বেশি আর কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমানা রিয়াজ ও কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমানকে মোবাইল ফোনে জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি।
পরে ইউএনওর কার্যালয়ে গেলে জরুরি সভার কথা বলে এ প্রতিবেদককে অপেক্ষা করতে বলেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর দেখা করার অনুমতি পেলেও ক্যামেরার সমানে কথা বলতে রাজি হননি ইউএনও রোমানা।
পরে ইউএনও বলেন, “আপনাদের কাছ থেকে খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গ্রাম পুলিশ পাঠানো হয়েছে।”
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভীন বলেন, “আমাদের তো ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নাই, তাই সরাসরি নিজেরা কিছু করতে পারি না। তবে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পাঁচবিবি ইউএনওকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করব।”