ট্রাফিক পুলিশের একটি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে।
Published : 03 Mar 2023, 05:30 PM
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কয়েকশ লোক পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, দোকানপাট ভাঙচুর ছাড়াও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারা মিছিল নিয়ে পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এলে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া জানান।
এ দিন থেকে রোববার পর্যন্ত তিনদিন শহরের উপকণ্ঠে আহমদনগরে এ জলসার আয়োজন করেছিল আহমদিয়া সম্প্রদায়। তার আগেই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা।
সন্ধ্যায় ওসি লতিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আহমদনগরে কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার কথা শুনেছি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
“এ ছাড়া সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র্যাব রয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসা বন্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুর ও রাতে কয়েকটি সংগঠন জেলা শহরে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়েন।
এর ধারাবাহিকতায় জুমার নামাজ শেষে শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে লোকজন ছোট ছোট মিছিল নিয়ে চৌরঙ্গী মোড়ে সমবেত হয়। পরে সেখান থেকে সম্মিলিত মিছিল বের করে।
এই মিছিলকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশ মিছিলের আশপাশে ছিল।
কিন্তু আকষ্মিকভাবে মিছিল থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশ ও মিছিলকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে বলে জানান ওসি লতিফ মিয়া।
এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “মিছিলকারীরা শহরের ধাক্কামারা এলাকায় গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করলে সেটি ভস্মীভূত হয়ে যায়।”
“বিক্ষোভকারীদের হামলায় পুলিশ ও বিজিবির গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় পঞ্চগড় বাজার এলাকায় একটি মার্কেটে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। পরে সেসব দোকান থেকে মালপত্র বের করে রাস্তায় পুড়িয়ে দেয়।
আতঙ্কে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। শহরে সাধারণ মানুষের চলাচল কমে গেছে। শহরে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিকে টহল দিতে দেখা গেছে। বিভিন্ন রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুপারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে আছেন।
আতঙ্কে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। শহরে সাধারণ মানুষের চলাচল কমে গেছে। বিভিন্ন রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
বিকালের দিকে শহরের উপকণ্ঠ আহমদিয়া নগরে কয়েকটি বাড়িঘরে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা।
স্থানীয় সংবাদকর্মী আব্দুল রহিম বলেন, এলাকাটিতে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অনেকেই বসবাস করেন। সেখানকার ১০টির অধিক বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
রহিম আরও বলেন, এলাকা থেকে অনেকেই পরিবার নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। পুলিশ সেখানে টহল দিচ্ছে। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।