নোটিশে সাত দিনের মধ্যে ইজারা বাতিলে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে বেলাকে অবহিত করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
Published : 28 Feb 2024, 12:10 PM
সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর ইজারা বাতিল করে বালু উত্তোলন বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
সমিতির আইনজীবী জাকিয়া সুলতানা মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট তিনটি মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৩ সরকারি কর্মকর্তাকে এই লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন। নোটিশে সাত দিনের মধ্যে ইজারা বাতিলে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে বেলাকে অবহিত করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
নোটিশের কপি হাতে পেয়েছেন বলে বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
বেলার এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে, ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিন সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারসহ সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর।
যাদুকাটা নদীকে ‘সীমান্ত নদী’ হিসেবে উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়েছে, ‘এ নদী ভারতের খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
নদীতে থাকা বালুমহাল নিয়ে বলা হয়েছে, এ নদীতে দু'টি বালুমহাল রয়েছে যা যাদুকাটা-১ এবং যাদুকাটা-২ বালুমহাল নামে পরিচিত। যাদুকাটা-১ বালুমহালটি তাহিরপুর উপজেলার চালিয়ারঘাট মৌজায় এবং যাদুকাটা-২ বালুমহালটি বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর মৌজার চালিয়ারঘাট, লাউর এবং ইকরাটিয়া মৌজায় অবস্থিত।
এর আগে ইজারা নেওয়া ব্যক্তিরা বালুমহাল ও বালুমহালের বাইরে যত্রতত্র থেকে যান্ত্রিক উপায়ে বালু উত্তোলন করেছেন।
এসব বালুমহালের কারণে পরিবেশ, পর্যটন ও স্থানীয়দের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার চিত্র তুলে বলা হয়েছে, “ফলে এশিয়ার বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র শিমুল বাগান, বারেক টিলা, শাহ্ আরেফিন সেতু, বিজিবি ক্যাম্প, অদৈত্য আখড়া, লাউড়ের গড় বাজার, বিন্নাকুলী বাজার, ঘাগটিয়া, গড়কাটি, মোদেরগাঁও, পাঠানপাড়া, কুনাটছড়া, সোহালা, মিয়ারচার ও সত্রিশ গ্রামের অসংখ্য ঘরবাড়ি ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মর্মে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। ”
“উল্লেখিত বালুমহাল দুটি ১৪৩১ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারা প্রদান থেকে বিরত থাকতে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছে, এছাড়া বালুমহাল দুটি ইজারা প্রদান না করার দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে।”
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ‘নিয়ম না মেনে ইজারা দেওয়ার পরে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশ, প্রতিবেশ বা জীববৈচিত্র বিনষ্ট বা সরকারি বা বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগস্ত বা জনস্বাস্থ্য বা জনস্বার্থ বিঘ্নিত হবার আশংকা থাকলে উত্তোলিত বালু পরিবহণের কারণে বিদ্যমান সরকারি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে জেলা প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনারের অনুমোদনক্রমে বালুমহাল বিলুপ্ত ঘোষণা করতে পারবে কিন্তু যাদুকাটা নদীতে বালুমহাল ঘোষণার ক্ষেত্রে বালু উত্তোলন সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালার বিধান প্রতিপালন করে কোনোরূপ হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ পরিচালনা করা হয়নি।
“এ সময় যাদুকাটা নদীর সংকটাপন্ন অবস্থা তুলে ধরে এলাকাবাসী এবং বেলার পক্ষ থেকে ইজারা বাতিল ও বালুমহাল বিলুপ্ত করতে জেলা প্রশাসককে একাধিকবার অনুরোধ জানানো হলেও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়নি যাদুকাটা নদীতে বিদ্যমান বালুমহাল দুটি।
উপরন্তু বিগত ২৫ জানুয়ারি, যাদুকাটা নদীতে বিদ্যমান উল্লেখিত বালুমহাল ১৪৩১ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারা প্রদানের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে যা প্রচলিত আইনের পরিপন্থী।”
নোটিশের বিষয়ে বেলার সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক আইনজীবী শাহ শাহেদা আখতার সাংবাদিকদের বলেন, ‘যাদুকাটা নদী সুনামগঞ্জে জেলার জন্য বিরাট ঐতিহ্য বহন করে; তবে প্রতিবছর ইজারার নামে যাদুকাটা এবং যাদুকাটার পরিবেশকে ধ্বংস করা হচ্ছে, যার ফলে আমরা বেলা লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি যেন যাদুকাটার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় এখানে বালু তোলা বন্ধ রাখা হয়।”
রাজস্ব কমার আশঙ্কার পরও চলছে ইজারার তোড়জোড়
আসছে ১৪৩১ বাংলা সনে যাদুকাটা নদীর নতুন ইজারা মূল্যে সরকারের ২৮ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব কম পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সর্বোচ্চ দরদাতা দুটি প্রতিষ্ঠান গত বছরের চেয়ে এমন কম মূল্যে ইজারা নিতে চাইলেও বন্ধ হয়নি ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া।
তবে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “বর্তমান মূল্যে নদী ইজারা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।”
প্রশাসনের তথ্যমতে, ১৪২৮ বাংলা সনে যাদুকাটা নদীর দুটি বালুমহাল ১২ কোটি, ১৪২৯ সনে ৩২ কোটি টাকায় ইজারা দিয়েছিল জেলা প্রশাসন।
চলতি ১৪৩০ বাংলা সনে তা বেড়ে দাড়িয়েছিল ৫৪ কোটি ৯২ লাখ টাকায়, ভ্যাট ও আয়করসহ যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৬৫ টাকা।
কিন্তু আসছে ১৪৩১ বাংলা সনে যাদুকাটা-১ বালুমহালের জন্য ১২ কোটি ৯০ লাখ এবং যাদুকাটা-২ এর জন্য ১৮ কোটি ৩০ লাখে সর্বোচ্চ দরদাতা হন সোহাগ এন্টারপ্রাইজের রতন মিয়া ও রিহান এন্টারপ্রাইজের মজিবুর রহমান।
অর্থাৎ দুটি মহাল মোট ৩১ কোটি ২০ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন ইজরাদাররা। ভ্যাট ও আয়করসহ যার মূল্য দাঁড়াবে ৪০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এই মূল্য চূড়ান্ত ধরে মহালগুলো ইজারা দিলে প্রায় ২৮ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে সরকার।