“দেশ স্বাধীন যেমন স্বপ্নের ছিল, ঠিক তেমনই পদ্মা নদীর উপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে- এটাও একটা স্বপ্নের মতো ছিল।”
Published : 09 Oct 2023, 11:40 AM
বছর, মাস পেরিয়ে অপেক্ষাটা এখন ঘণ্টার হিসাবেও করা যায়। ঝিকঝিক শব্দে আরামদায়ক দুলুনিতে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকায় আসার অধীর আগ্রহ এখন ফরিদপুরে।
মঙ্গলবার বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই রুটে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল চলাচলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী ট্রেনে সরকার প্রধানের ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আসার কথা রয়েছে।
পরে ভাঙ্গা উপজেলা সদরের কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়াম মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি বক্তব্য দেবেন।
সোয়া এক বছর আগে দেশের বৃহত্তম এই সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হওয়ায় ফেরির ভোগান্তি এখন স্মৃতি মাত্র। এখন রেলপথেও ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হওয়ায় আনন্দের বন্যায় ভাসছেন ফরিদপুর ও আশপাশের জেলার বাসিন্দারা।
পদ্মা সেতু ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা এই রেল সড়কে যাত্রীবাহী ট্রেন ও পণ্যবাহী ট্রেনের গতি পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি।”
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণের জন্য সরকার পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প অনুমোদন করে ২০১৬ সালে। বর্তমানে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চলাচলের জন্য প্রস্তুত। সেই অংশেই ট্রেন চলাচল উদ্বোধন হচ্ছে মঙ্গলবার।
ফরিদপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফয়েজ শাহ নেওয়াজ বললেন, “দেশ স্বাধীন যেমন স্বপ্নের ছিল, ঠিক তেমনই পদ্মা নদীর উপর দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য ট্রেন চলাচল করবে- এটাও একটা স্বপ্নের মতো ছিল। সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টায় আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। ভাবতেই অবাক লাগছে।”
ঈদসহ প্রতিটি উৎসবে ঢাকা থেকে পদ্মা পাড়ি দিয়ে আসতে মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো উল্লেখ করে বোয়ালমারী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়া বলেন, “এসব সময়ে যাত্রীদের কাছ থেকে গণপরিবহনগুলো তাদের খেয়াল খুশিরমত ভাড়া আদায় করতো। ট্রেন চালু হতে যাওয়ায় আমরা খুশি , এই ট্রেনে অন্যসময় তো বটেই বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে সাশ্রয়ী মূল্যে বাড়িতে ফিরতে পারবে এ অঞ্চলের মানুষ।”
ট্রেনে চড়ার অভিজ্ঞতা নিতে মানুষ মুখিয়ে আছে বলে জানালেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা মহিলা কলেজের শিক্ষক দিলীপ রায়।
তার কথায়, “কয়েক দিন ধরে রেললাইন পরিষ্কার করছে ও দফায় দফায় ট্রায়াল ট্রেন চলছে। ট্রেনের শব্দে যেন আর তর সইছে না আমাদের। যে পদ্মা নদীতে আগে ফেরি-লঞ্চে পার হতাম, সেই পদ্মা সেতুতে এখন ট্রেন চলবে ভাবতেই স্বপ্ন মনে হয়।”
আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদ হাসান বললেন, “এ উপজেলার অনেকেই ব্যবসার কাজে ঢাকায় যায়। এখান থেকে ভেঙে ভেঙে গেলে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫৫০ টাকার বেশি খরচ হত।
“ট্রেন চালু হলে নিশ্চয়ই এত খরচ হবে না। পাশাপাশি মালামালও ট্রেনে করে নিয়ে আসতে পারবে।”
ট্রেন চালুতে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখছেন ফরিদপুর চেম্বারের প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম।
“ফরিদপুরের পাটকলগুলো নয় শুধু, পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যটি স্বল্প সময়ে অল্প খরচে রাজধানীতে নিতে পারবে। এটা বিরাট ব্যাপার । সরকারের আন্তরিকতা ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।”
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক অারিফ বলেন, এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের অবহেলিত মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি দ্বার উন্মোচন হবে রেল সংযোগের মধ্যে দিয়ে।
“মানুষের জীবনমানের যেমন পরিবর্তন হবে, তেমনই এখানকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্দীপনার সৃষ্টি করবে। এতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবকয়টি সংসদীয় আসন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়া যাবে বলে আমি মনে করি।”