কুমিল্লা নগরীর মধ্য রেসকোর্স থেকে শাসনগাছা কৃষি কার্যালয় পর্যন্ত দীর্ঘ এ ওভারপাসের বাতিগুলো মেরামতের দাবি জানিয়েছেন পথচারী, পরিবহন চালক ও স্থানীয়রা।
Published : 16 Jan 2025, 09:39 AM
প্রতিটি ল্যাম্পপোস্টের নীচে খুঁড়ে বিদ্যুতের তার চুরি করে নিয়ে কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা রেলওয়ে ওভারপাসটির সবগুলো বাতিই অকেজো করে ফেলা হয়; তারপর রাতের অন্ধকারে সেখানে বসানো হয় মাদকের আড্ডা; মওকা বুঝে করা হয় ছিনতাই।
দীর্ঘদিন ধরে ওভারপাসটির ৬৪টি বৈদ্যুতিক বাতির কোনোটিই আর কার্যকর না থাকলেও সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষেরই নজরে আসেনি বিষয়টি। ওভারপাসটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার- এ নিয়ে ঠেলাধাক্কায় ভুতুড়ে পরিবেশে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে ভুক্তভোগীর সংখ্যাই শুধু বাড়ছে।
নগরীর মধ্য রেসকোর্স থেকে শাসনগাছা কৃষি কার্যালয় পর্যন্ত দীর্ঘ এ ওভারপাসের ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো মেরামতের দাবি জানিয়েছেন পথচারী, পরিবহন চালক ও স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপদ (সওজ) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, “ওভারপাসের ল্যাম্পপোস্টের তার চুরি হয়ে গেছে। আমরা একটি মামলা করব। বাতিগুলো জ্বালানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কুমিল্লা নগরীর যানজট নিরসন ও মানুষের ভোগান্তি কমাতে ২০১৫ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের উপর নির্মিত হয় এই ওভারপাসটি। (স্থানীয়দের কাছে এটি ‘শাসনগাছা ফ্লাইওভার’ নামে পরিচিত)।
সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায়, ওভারপাসে ৬৪টি ল্যাম্পপোস্ট ও বাতি থাকলেও সব বিকল। ল্যাম্পপোস্টের নিচে ভাঙা অবস্থায় গর্ত রয়েছে। সেখান থেকেই বৈদ্যুতিক তার চুরি করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় এক বছর ধরে একে একে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে ওভারপাসের ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো। আর অগাস্টের পর থেকে সবগুলোর বাতি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে রাত বাড়লেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় পুরো ওভারপাস।
যানবাহন চালকরা জানান, চালুর কয়েক বছর ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো ঠিকই ছিল। মাদকাসক্ত ও ছিঁচকে চোরচক্র ল্যাম্পপোস্টের গোড়া ভেঙে ভিতরে থাকা বৈদ্যুতিক তার চুরি করে নিয়ে যায়। এতে আস্তে আস্তে লাইটগুলো বিকল হয়ে পড়ে।
রেসকোর্সের অটোরিকশার চালক মোশারফ হোসেন বলেন, “কয়েক মাস ধরে ফ্লাইওভারের ল্যাম্পপোস্টের গোড়ায় একজন মাদকাসক্তকে বসে বসে খুঁড়তে দেখেছি। বৈদ্যুতিক তার চুরি করে নিয়ে যায় এসব চক্র।”
সিলেট থেকে আসা আবুল হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, “কান্দিরপাড় যাব, ফ্লাইওভারের গোড়ায় নামার পর দেখি পুরো ফ্লাইওভার অন্ধকার। এখন ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যাব কিনা ভাবতেছি। এত অন্ধকারে গেলে ছিনতাই হওয়ার আশঙ্কা আছে।”
আশপাশের লোকজন জানান, ফ্লাইওভারে নজরদারি রাখতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও আলো না থাকায় রাতে সেগুলো একরকম অকেজো হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে কারো মাথাব্যাথাও নেই।
ওভারপাস দিয়ে চলাচলকারী অটোরিকশার চালক মো. জাকির হোসেন বলেন, “আমি প্রতিদিন ফ্লাইওভার দিয়ে যাত্রী আনা-নেওয়া করি। আগে রাতেও গাড়ি চালাতাম। এখন ফ্লাইওভারে কোনো বাতি জ্বলে না। তাই সন্ধ্যার পর ওই পথ দিয়ে আর যাই না।
“আমি নিজে দেখেছি, ভবঘুরে ও মাদকাসক্তরা ল্যাম্পপোস্টের গোড়া খুঁড়ে বৈদ্যুতিক তার কেটে নিয়েছে। আমি গাড়ি থামিয়ে বাধা দিয়েছি কিন্তু শোনেনি। সবগুলো ল্যাম্পপোস্টের গোড়া থেকে তার চুরি করে নিয়েছে মাদকাসক্তরা। আলো না থাকায় ভুতুড়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন হওয়ায় মাদক সেবনের নিরাপদ পরিবেশ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে গাড়ির হেডলাইটই আমাদের ভরসা।”
কুমিল্লার শাসনগাছার নিউ সুগন্ধা বাসের সাধারণ সম্পাদক সালাাউদ্দিন বিপ্লব বলেন, “কে বা কারা ল্যাম্পপোস্টের বৈদ্যুতিক তার চুরি করে নিয়ে গেছে। বর্তমানে ফ্লাইওভারে একটি লাইটও জ্বলে না। রাত বাড়লে ফ্লাইওভারে ছিনতাই-ডাকাতি ও যাত্রীরা হয়রানির শিকার হয়। লাইটগুলো পুনরায় মেরামত করা জরুরি।
“কয়েকদিন আগে ফ্লাইওভারের উপর একটি মাছের গাড়ি এবং এক নারীর কাছ থেকে ছিনতাই হয়েছে। তারা এসে আমাদের জানিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব জানে। কিন্তু যাদের ছিনতাই হয়, তারা পুলিশের কাছে যান না। আমরা এখানে পরিবহন ব্যবসা করি সারাদিন থাকি, এসব ঘটনার সাক্ষী হই আমরা। আমরা চাই ফ্লাইওভারে দ্রুত আলো জ্বলুক।”
কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের কার্যকরী সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “শাসনগাছা ফ্লাইওভারের লাইটগুলো সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে হ্যান্ডওভার করেছে। এটি এখন তারা দেখবেন। দীর্ঘদিন এই লাইটগুলো বন্ধ রয়েছে। রাতে যাত্রীরা ছিনতাইয়ের শিকার হয়। লাইটগুলো দ্রুত ঠিক করা জরুরি।”
কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, “ফ্লাইওভারটি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনেরও দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে। এই বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো কেন জ্বলে না চেক করার জন্য আমি লোক পাঠাচ্ছি। দ্রুত ল্যাম্পপোস্টের বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হবে।”
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. ছামছুল আলম বলেন, “ফ্লাইওভারটি আমাদের না, এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। আমরা মাঝে মধ্যে নগরবাসীর স্বার্থে লাইটিং করে দেই। তারপরও যেহেতু বিষয়টি জেনেছি- আমি বিদ্যুতের লোক পাঠিয়ে দেখব কী সমস্যা।”
কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ওসি মাহিনুল ইসলাম বলেন, “ওভারপাসের উপর ছিনতাইয়ের ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি। তবে আমরা জেনেছি, ওভারপাসে আলো জ্বলে না। তাই আমরা সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছি কেউ যেন ওভারপাসের উপরে গাড়ি না থামায়।
“আর আমরা সেখানে একটি নিয়মিত টহল ও নজরদারির জন্য বলে দিয়েছি। তবে দ্রুত সেখানে আলোর ব্যবস্থা করা উচিত।”