পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ দুই আইনজীবী কোনো আদালতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
Published : 25 Apr 2023, 09:00 PM
আইনজীবীদের কল্যাণ তহবিলের স্থায়ী আমানতের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান ও সাবেক সভাপতির সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম জানান, সোমবার রাতে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
এ দুই সদস্য হলেন শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি আবু সাঈদ ও সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম।
সমিতির সভার সিদ্ধান্তের বরাতে তাজুল ইসলাম জানান, সমিতির এফডিআরের ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ ও সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলামের জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ স্থগিত করা হয়েছে।
তিনি জানান, এ ঘটনা তদন্তে অ্যাডভোকেট বজলুর রশিদ আকন্দকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী ৮ মের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। ১০ মে সমিতির জরুরি সাধারণ সভায় আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ দুই আইনজীবী কোনো আদালতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় সহ-সভাপতি রাকিবুল হাসান রোমান, সাধারন সম্পাদক তাজুল ইসলাম, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মৃধা নজরুল কবির, সহ-সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ আবুল কাসেম সরদার, অডিট সম্পাদক জসিম উদ্দিন, কার্যকরী সদস্য আলমগীর হোসেন হাওলাদার, আমিনুল ইসলাম, আতাউর রহমান সোহেল, শহিদুল ইসলাম সজিব ও আবুল কাসেম ফজলুল হক উপস্থিত ছিলেন।
সমিতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সমিতিতে ২৫৫ জন নিবন্ধিত আইনজীবী আছেন। তাদের ভোটে প্রতিবছর ১৫ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির নেতৃত্বে ওকালতনামা, নীল কাগজ বিক্রি, জামিননামা (বেইল বন্ড) বিক্রি, সরকারি অনুদান, করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুদান, মেডিকেল ফান্ড, কল্যাণ ফান্ডের টাকা, চারতলা ভবনের ৬২টি কক্ষের ভাড়া আদায় করা হয়। সমিতির আয়ের ওই টাকা সমিতির সদস্যদের কল্যাণের জন্য ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা হয়। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকে ৬৫ লাখ টাকা এফডিআর করা হয়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত আরও ৬৫ লাখ টাকা এফডিআর করা হয়। ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এফডিআরের ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ও এর লভ্যাংশের ৫০ লাখ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে।
এ সময়ের মধ্যে আবু সাঈদ দুই দফা সভাপতি ও দুই দফা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আর জহিরুল ইসলাম একবার সভাপতি ও দুবার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ বছর আবার আবু সাঈদ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
গত ফেরুয়ারিতে নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজুল ইসলাম। শপথ গ্রহণের পর তিনি সমিতির কল্যাণ তহবিলের কাগজপত্র বুঝে নেওয়ার সময় এফডিআরের খোঁজ নিতে গিয়ে আত্মসাতের তথ্য পান। বিষয়টি আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
এ ব্যাপারে জেলা বারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হানিফ মিয়া বলেন, “আমাদের ধারণা জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান ও সাবেক সভাপতি মিলে ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কমপক্ষে ১৫ দিন যাবত বর্তমান সভাপতি পালিয়ে আছেন। তদন্তকালে এ রহস্য বেরিয়ে আসবে।”
আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, সমিতির কল্যাণ তহবিলের এফডিআরের ১ কোটি ৩০ লাখ ও এর লভ্যাংশের ৫০ লাখসহ মোট ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়। তখন সমিতির সভাপতি আবু সাঈদ ও সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম দায়িত্বে ছিলেন। বিষয়টি সামনে এলে বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নেওয়া হয়।
“কোনো ব্যাংকেই আইনজীবী সমিতির নামে এফডিআরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তখন চাপে পড়ে আবু সাঈদ ৪০ লাখ টাকা ফেরত দেন। তদন্ত করলে আরও কিছু বের হবে।”
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলে আগামী ১০ মে জরুরি সাধারণ সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
“প্রাথমিক পর্যায়ে ওই দুজনের সমিতির সদস্য পদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
অভিযোগের বিষয়ে জহিরুল ইসলাম বলেন, “বিভিন্ন সময়ে এফডিআর ম্যাচুরিটি হওয়ার তথ্য আমাকে জানানো হয়েছে। আবু সাঈদ বিভিন্ন সময় এফডিআর করার কথা বলে আমার কাছ থেকে বিভিন্ন ডকুমেন্ট ও চেকে সই নিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি এফডিআরের কপিও আমাকে দেখিয়েছেন। এখন মনে হচ্ছে ওসব নকল। ঘটনাটি জানাজানি হলে তিনি স্বীকার করেছেন টাকা ফেরত দেবেন বলে জানান। ইতোমধ্যে ৪০ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। আর এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
আবু সাঈদ বলেন, “একটি এফডিআর ম্যাচিউরড হয়েছে। ওই এফডিআরের ৪৯ লাখ টাকা আমার অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল, তা থেকে ৪০ লাখ টাকা গত সপ্তাহে আমি দিয়ে দিয়েছি। এর বাইরে আর কোনো টাকার বিষয়ে এই মুহূর্তে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। বিষয়টি যেহেতু তদন্ত করা হবে, তাই তদন্ত হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।”
সোমবারের আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সভাপতি আবু সাঈদ উপস্থিত হননি।