“নিহতের দুই কান কাটা; মুখে, চোয়াল ও গলাসহ একাধিক স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।”
Published : 27 Dec 2024, 05:00 PM
ফেনীতে ষাটোর্ধ্ব এক গৃহপরিচারিকার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাতে ফেনী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফলেশ্বর এলাকার একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে বলে ফেনী মডেল থানার ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা জানান।
নিহত মাসুদা বেগম (৬৫) ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের পিঠাপাশারী এলাকার মোস্তফা ভূঁঞা বাড়ির সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী।
তিনি গত দুই দশক ধরে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফলেশ্বর এলাকার গোলাম ফারুক কমিশনারের বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ওসি বলেন, “ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর গোলাম ফারুক ও তার ভাই গোলাম কিবরিয়া বকুলের বাসায় দীর্ঘদিন ধরে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন মাসুদা বেগম। অন্যসময়ে এ বাড়িতে লোকজন থাকে না। গত এক সপ্তাহে ফারুক ও গোলামের স্বজনরা বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার রাতে চারতলা ভবনের নিচতলায় মাসুদার ঘর থেকে চিৎকার শুনে ওপর থেকে নেমে আসেন বকুলের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার। এ সময় মাসুদার ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল।
“পরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলে সুযোগ বুঝে রক্তাক্ত ছুরি হাতে নিয়ে এক যুবক ওই ঘর থেকে পালিয়ে যায়। তখন ওপর তলা থেকে কয়েকজন নিচে নেমে আসলে বকুলের ঘরের সোফার নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় গৃহপরিচারিকা মাসুদার মরদেহ দেখতে পায়। এ সময় তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে মরদেহ উদ্ধার করে।”
নিহত মাসুদার ছেলের বউ জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “আমার শাশুড়ি সাবেক পৌর কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা গোলাম ফারুক ও তার ভাই গোলাম কিবরিয়া বকুলের বাসায় ২০ বছর ধরে গৃহপরিচারিকার কাজ করে আসছেন। গত সোমবার ওই বাড়ির লোকজন ঢাকা থেকে বাড়ি এলে তাকে কাজের জন্য ডেকে আনা হয়।”
নিহত মাসুদার আরেক ছেলের বই রাহেনা আক্তার বলেন, “বৃহস্পতিবার বিকালে শাশুড়ির চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ ও পান কিনে দিয়ে তিনি বাড়ি চলে যান। রাতে ফারুক কমিশনারের স্ত্রী মোবাইল ফোনে আমাদের তাদের বাড়িতে যেতে বলেন। বারবার কারণ জিজ্ঞেস করলেও তারা আমাদের কিছু বলেনি।
“পরে এখানে এসে দেখি বকুল স্যারের ঘরের সোফার নিচে আমার শাশুড়ির রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে আছে। শাশুড়ি বলেছিলেন, কাজ শেষে পরদিন শুক্রবার বাড়িতে ফিরে যাবেন।”
গোলাম কিবরিয়া বকুলের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার বলেন, “আমরা দুই জা মিলে ভবনের তৃতীয় তলার বাসায় ছিলাম। হঠাৎ আওয়াজ শুনে নিচে এসে ঘরের ভেতর থেকে দরজা বন্ধ দেখতে পেয়েছি। মাসুদাকে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোর-ডাকাত সন্দেহে বাড়ির অন্যদের জানানোর জন্য উপরে উঠতেই দরজা খুলে দৌঁড়ে এক যুবককে পালিয়ে যেতে দেখেছি।”
ফেনী মডেল থানার ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, “নিহতের দুইকান কাটা; মুখে, চোয়ালে, গলাসহ একাধিক স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনা তদন্তে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিএসবি, পিবিআই ও সিআইডি ঘটনাস্থলে এসে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ ও তদন্তের কাজ শুরু করেছে।”
তিনি বলেন, “ওই ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৯টা ১৩ মিনিটে কালো প্যান্ট ও সাদা চেক শার্ট পরা এক যুবক ভবনে প্রবেশ করছে। আবার ৯টা ১৭ মিনিটে ওই যুবক ভবন থেকে ছুরি হাতে দৌড়ে বের হয়ে যায়। অজ্ঞাত পরিচয় ওই যুবককে শনাক্তে কাজ চলছে। এ ঘটনায় নিহতরের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।”