সংশোধিত আইন অনুযায়ী, এবার জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা কমবেশি হবে।
Published : 26 Aug 2022, 05:09 PM
দ্বিতীয় জেলা পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন; সেই নির্বাচনে রাজশাহীতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে নেমেছেন কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা।
১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে কারা প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের মধ্যে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের অন্তত পাঁচজন নেতা ভোটের মাঠে থাকার কথা বলেছেন; তারা এবার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলেও জানিয়েছেন। তারা ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন এবং ভোট প্রার্থনা করছেন।
দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী পাঁচ নেতা হচ্ছেন- রাজশাহী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রশাসক মোহাম্মদ আলী সরকার, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক রায়হান, জেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবিউল আলম বাবু এবং সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান আখতার।
এর বাইরে কাঁকনহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল মজিদ মাস্টার, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম শরীফও মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
তবে এই নির্বাচন নিয়ে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী বা বামদলগুলোর তেমন কোনো আলোচনা চোখে পড়েনি। বিএনপি নেতারা বলছেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা যাবেন না। ২০১৬ সালের প্রথম জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি।
২৩ অগাস্ট নির্বাচন কমিশন তিন পার্বত্য জেলা বাদ দিয়ে ৬১ জেলা পরিষদে ভোটের তফসিল ঘোষণা করেন। এতে সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত ৬৩ হাজারের বেশি জনপ্রতিনিধি ভোট দেবেন।
তফসিল অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাইয়ের পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর।
নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান শুক্রবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এবারের নির্বাচন হবে জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০২২ অনুসারে। এতে প্রথমবারের সঙ্গে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদের সংখ্যায় কিছু পার্থক্য হবে।
“আগে প্রতি জেলায় ১৫ জন সাধারণ সদস্য এবং পাঁচ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকার বিধান ছিল। তা সংশোধন করে প্রত্যেক উপজেলায় (জেলার মোট উপজেলার সমানসংখ্যক) একজন করে সদস্য এবং চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলার সংখ্যা যাই হোক, সংরক্ষিত নারী সদস্য দুইজনের কম হতে পারবে না। ভোটাররা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট দেবেন।
সংশোধিত আইন অনুযায়ী, এবার রাজশাহী জেলা পরিষদে ১৩ জন নির্বাচিত হবেন বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন। তিনি বলেন, “এখানে ভোটার সংখ্যা এক হাজার ১৮৬ জন। তাদের ভোটে একজন চেয়ারম্যান, নয় জন সাধারণ সদস্য এবং তিনজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন।”
রাজশাহীর প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান প্রশাসক মোহাম্মদ আলী সরকার এবারও দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি গতবার মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু পাননি। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করে জয়ী হন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং জাতীয় পরিষদ সদস্য মাহবুব জামান ভুলুকে পরাজিত করেছিলেন।
মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, “গতবার মনোনয়ন চেয়েও পাইনি। পরে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হয়েছি। এবারও দলের মনোনয়ন চাইব। আশা করি, এবার দল আমাকে বিমুখ করবে না।”
মীর ইকবাল আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য। তিনি ১৬ বছর রাজশাহী শহর ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মীর ইকবাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জীবনের শেষ সময়ে এসে নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছি। আশা করি, দল আমাকে সেই সম্মান দেবে।”
নগরীর চারঘাটের বাসিন্দা রায়হানুল হক রায়হান ১৯৯৬ সালের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর কাছে তিনি হেরে যান। তাকে নিয়েও আলোচনা আছে ভোটারদের মধ্যে।
রায়হানুল হক বলেন, “আমার প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা আছে। এখন দল যা সিদ্ধান্ত দেবে, তা-ই হবে।”
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে গতবারও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন রবিউল আলম বাবু। আশির দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির ছাত্রনেতা রবিউল আলম বাবু জেলা কৃষক লীগের টানা তিনবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
এ ছাড়া তিনি রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স ইন্ড্রাস্টির সাবেক পরিচালক। রবিউল আলম বাবুর বড় ভাই শামসুল আলম একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন।
রবিউল আলম বাবু বলেন, “জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে গতবারও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবারও চাইবো। এবার আশাবাদী। তবে দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই হবে।”
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন আক্তারুজ্জামান আখতার।
তিনি বলেন, “এই নির্বাচনে ভোটার স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা। আমি তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান থাকায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভালো। সে কারণেই জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন চাচ্ছি।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, “কেবল তফসিল ঘোষণা করা হলো। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সমন্বিত সিদ্ধান্তে প্রার্থীদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এটি সমন্বয় করবেন। তারপরই প্রার্থীর ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত হবে।”
জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসা।
একই কথা জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
আরও পড়ুন: