মেধাবী কিশোর ত্বকী হত্যার বিচার এক দশকেও শুরু না হওয়ায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন খ্যাতিমান নাট্যকার মামুনুর রশীদ।
বুধবার সন্ধ্যায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নারায়ণগঞ্জ শহরের পাঁচ নম্বর ঘাটে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার দশম বর্ষপূর্তিতে ‘আলোর ভাসান’ অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।
মামুনুর রশীদ বলেন, “আগামী ৫০ বছরের জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। কারণ আগামীতে ত্বকীরা খুন হলে যাতে কেউ প্রতিবাদ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করেছে সরকার। নারায়ণগঞ্জের কিশোর ত্বকী ছিল মেধার একটি উদাহরণ। ত্বকীর মতো মেধা খুন হচ্ছে কিন্তু বিচার হচ্ছে না। দেশে বিচারহীনতার একের পর এক দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে।”
ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করে মামুনুর রশীদ বলেন, “পরবর্তী প্রজন্মের ত্বকীদের অবস্থা কী? এ সরকার সাংঘাতিকভাবে উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। মূল্যবোধ কীভাবে শিখবে মানুষ? প্রাইমেরি স্কুলে চাকরি পেতে গেলে ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকা লাগে।
“যে শিক্ষক টাকা দিয়ে চাকরি নিলেন সেই শিক্ষক তো ছাত্রকে মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে পারবে না। কারণ তাকে উপার্জন করে ঋণ শোধ করতে হবে।”
মূল্যবোধের পরিবর্তে টাকা ও পেশির সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, টাকা দিয়ে পেশিশক্তি কেনা যাচ্ছে। চারদিকে এত এত টাকা। অথচ অধিকাংশ মানুষ সে টাকার হদিস পায় না। একদিকে এক শ্রেণি আঙুল ফুলে কলাগাছ। অপরদিকে অনেকে মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত।
ত্বকীর বাবা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ঘাতকরা যতই চেষ্টা করুক না কেন সত্য চাপা থাকে না। লাশ যখন নিজে কথা বলা শুরু করে সেটি হয় ভয়ঙ্কর সত্য। লাখো মানুষ ত্বকী হত্যার বিচার চায়। শুধু ত্বকী নয় এমন নৃশংস সকল হত্যার বিচার চায়।
“আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ সমাজ চাই। এ বাংলাদেশ মুষ্টিমেয় কিছু ঘাতকের হতে পারে না।
“সরকারের হাত ঘাতকের মাথার উপর যেভাবে রয়েছে তার ধিক্কার জানাই। ঘাতকের পক্ষে সরকার, রাষ্ট্রযন্ত্র থাকলেও ঘাতকরা চিরস্থায়ী হয় না। জনশক্তির উত্থানের মধ্য দিয়ে এরা পরাজিত হয়।”
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে এই সময় আরও বক্তব্য রাখেন খেলাঘর আসরের সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ।
ত্বকী স্মরণে ‘আলোর ভাসান’ অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এই সময় নাটক, আবৃতি আলেখ্য, গান ও কবিতা পরিবেশন করেন বিভিন্ন সংস্কৃতিকর্মীরা। পরে শীতলক্ষ্যা নদীতে আলোকশিখা ভাসানো হয়।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকালে শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুইদিন নিখোঁজ থাকার পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা খাল কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তাকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ রয়েছে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। তবে এই পরিবারের সদস্যরা বারবার তা অস্বীকার করে আসছেন।
ত্বকী হত্যার বিচার শুরু হয়নি এক দশকেও