ওসমানী মেডিকেলে শিক্ষানবিস চিকিৎসকদের আন্দোলন অব্যাহত, সেবা ব্যাহত

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2022, 12:49 PM
Updated : 3 August 2022, 12:49 PM

হামলাকারীদের গ্রেপ্তারসহ অন্যান্য দাবি পূরণ না হওয়ায় সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।

বুধবার দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতিতে জরুরি বিভাগ, আইসিইউ ও কার্ডিওলজি বিভাগ ছাড়া অন্য বিভাগে সেবা দিচ্ছেন না তারা। ফলে হাসপাতালের রোগীর সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

শিক্ষানবিস চিকিৎসককে লাঞ্ছনা ও মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তারা আন্দোলনে নেমেছেন।

বুধবার সকাল থেকে মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা।

পরে দুপুর ১টার দিকে হাসপাতালের ফটক বন্ধ করে শিক্ষানবিস চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা মেডিকেল রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধের পর বেলা ২টায় কলেজে ফিরে যান তারা।

এ সময় তারা হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে বৃস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে বহির্বিভাগসহ ওসমানী হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহমদ মুন্তাকিম চৌধুরী বলেন, “আমাদের নিরাপত্তা ও দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”

এদিকে শিক্ষানবিস চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা ব্যাহত হচ্ছে।

হাসাপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের এক রোগীর স্বজন আহমদ হোসাইন জানান, সকালের দিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ডাক্তাররা থাকেন। কিন্তু বিকাল ও রাতে ডাক্তারদের পাওয়া যায় না। ফলে রোগীরা সেবা ঠিকমত পাচ্ছেন না।

সার্জারি বিভাগের এক রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজন আমিন উদ্দিন জানান, শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা সেবা দেওয়ায় রাতে ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছে না। নার্সরা কোনোমতে সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “রোগীদের জিম্মি করে আন্দোলন ও দাবি আদায় করা কতটুকু যৌক্তিক তা আমার বোধগম্য নয়। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রুত সমাধান করে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করুক।”

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আন্দোলন করলেও সার্বিক চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের নিরাপত্তা জোরদার করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

মাহবুবুর রহমান বলেন, “শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা হাসপাতালে বড় একটা রোল প্লে করে। এটা সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতেই তারা দায়িত্ব পালন করে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এ সংকটের সমাধান হবে। তারা কর্মবিরতিতে থাকায় অবশ্যই স্বাভাবিক কাজে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমাদের আশা আসামিরা তাড়াতাড়ি গ্রেপ্তার হবে এবং সবাই স্বাভাবিক কাজে ফিরে যাবে।”

রোববার রাতে এক নারী শিক্ষানবিস চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের ঝগড়া দিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। এর জেরে সোমবার রাতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের হামলার শিকার হন শিক্ষার্থী রুদ্র নাথ ও নাইমুর রহমান ইমন।

এরপর এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চিকিৎকদের সঙ্গে মঙ্গলবার দুপুরে বৈঠকে বসেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তবে প্রশাসনের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দেন।

ইতোমধ্যে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিস নারী চিকিৎসকের শ্লীলতাহানির অভিযোগ ও কলেজের দুই শিক্ষার্থীর উপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহমুদুর রশিদ ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দুটি দায়ের করেন।

কোতোয়ালি থানার ওসি আলী মাহমুদ জানান, রোববার রাতে শিক্ষানবিস নারী চিকিৎসকের শ্লীলতাহানির মামলায় একজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৩-৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আর সোমবার রাতে দুই শিক্ষার্থীর উপর হামলার অভিযোগে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, “পুলিশ সব হামলাকারীদের শনাক্ত করেছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আশা করছি দ্রুত সবাইকে গ্রেপ্তার করতে পারব।”

ইতোমধ্যে ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিদ হাসান রাব্বি ও স্থানীয় বাসিন্দা এহসান আহম্মদকে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।