মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে, বলছে পুলিশ।
Published : 09 Feb 2025, 11:24 AM
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় চোর সন্দেহে এক মানসিক প্রতিবন্ধীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
কবিরহাট থানার ওসি মো. শাহিন মিয়া জানান, এ ঘটনায় নিহতের মা নাজিয়া খাতুন বাদী হয়ে শনিবার রাত ১টার দিকে থানায় হত্যা মামলা করেন।
এর আগে শুক্রবার গভীররাতে কবিরহাটের ছবির পাইক গ্রামে ধুমচর ছমিরপাইক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ৪০ বছর বয়সী জহির উদ্দিন বেচুকে পিটিয়ে হত্যা করেন স্থানীয়রা।
বেচু কবিরহাটের সুন্দলপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর লামছি গ্রামের মো. মোস্তফার ছেলে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ওই ইউনিয়নের ছবির পাইক গ্রামের বাদশা মিয়ার দুই ছেলে হাবিব উল্লা (৪৫) ও অজিউল্লা লিটন (৪০) ও সদর উপজেলার অশ্বদিয়া ইউনিয়নের মুকবুল আহমেদ চৌকিদারের ছেলে আবদুর রব খান সাহেব (৬৫)।
এদিকে বেচুকে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যার তিনটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
মোবাইলে ধারণ করা তিনটি ভিডিওর মধ্যে একটিতে দেখা যায়, কয়েকজন বেচুকে মাটিতে ফেলে বেধড় পেটাচ্ছে। তাদের মধ্যে একজনকে বেচুর চোখ উপড়ে ফেলার কথা বলতে শোনা যায়। একজন বেচুর সঙ্গে আর কে ছিল- তার নাম না বললে তাকে জানে মেরে ফেলার কথা বলতে শোনা যায়।
অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়- সকালে বেচুকে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। গুরুতর জখম নিয়ে তিনি কাতরাচ্ছেন আর লোকজন তা দেখলেও কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।
অন্য ভিডিওটিতে তাকে সড়কে পড়ে কাতরাতে দেখা যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, শুক্রবার ভোররাতের দিকে একদল লোক চোর সন্দেহে
মানসিক ভারসাম্যহীন বেচুকে আটক করে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। এক পর্যায়ে বেচুর চোখ, মুখ, হাত, ও পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে খুঁচিয়ে জখম করা হয়। নির্যাতনের পর একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয় তাকে। সকাল ৯টা পর্যন্ত গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় কাতরাতে থাকেন বেচু। পরে হাসপাতালে নেওয়ার সময় সকাল ১০টার দিকে মিয়ার হাট বাজারের কাছে তার মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে বেচুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
ঘটনার পর সুন্দলপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. হানিফ বলেন, “বেচুর কিছুটা মানসিক সমস্যা রয়েছে। চার সন্তানের জনক বেচু খুঁটিনাটি দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কখনও বড় ধরনের কোনো চুরি করছে বলে কারও জানা নেই।”
এছাড়া ঘটনাস্থলের পাশে বেচুর বোন ও খালার বাড়ি এবং সে প্রায়ই বোনের বাড়িতে যাতায়াত করত বলেও জানান ইউপি সদস্য।
বেচু ২০২০ সাল থেকে সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছিলেন বলে কবিরহাট উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন।
ওসি মো. শাহিন মিয়া বলেন, “বেচুর মা নাজিয়া খাতুন মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় ২০-২৫ জনকে আসামি করেছেন। মামলার পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “ঘটনার সময় মোবাইলফোনে ধারণ করা ভিডিও দেখে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। দুপুরে তাদরকে জেলার মুখ্য বিচারিক আদালতে হাজির করা হয়েছে।”