বেচুকে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যার তিনটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
Published : 08 Feb 2025, 07:28 PM
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় ‘চোর সন্দেহে’ এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। যিনি ‘বুদ্ধি প্রতিবন্ধী’ হিসাবে সরকারি ভাতা পেতেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার ছবির পাইক গ্রামে ধুমচর ছমিরপাইক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন কবিরহাট থানার ওসি মো শাহিন মিয়া।
নিহত জহির উদ্দিন বেচু (৪০) উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর লামছি গ্রামের প্রয়াত মো. মোস্তফার ছেলে।
পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের অভিযোগ- শুক্রবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে জহির উদ্দিন বেচু প্রথমে ধুমচর ছমিরপাইক মসজিদের তালা ভাঙার চেষ্টা করেন। এ সময় মসজিদের ইমাম সজাগ হয়ে গেলে সেখান থেকে চলে যান তিনি।
এরপর তিনি মসজিদের পাশের একটি ছোট চায়ের দোকানে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন মসজিদের ইমাম মোবাইলে আশপাশের লোকজনকে বিষয়টি জানিয়ে দেন।
মুহূর্তের মধ্যে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে তাকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে বেচু মাটিতে পড়ে গেলে তাকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। এতে গুরুতর আহত হয়ে সেখানেই পড়ে থাকেন বেচু।
পরে সকাল ৮টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
কবিরহাট উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন- “জহির উদ্দিন বেচু ২০২০ সাল থেকে সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে আসছিলেন।”
সুন্দলপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. হানিফ বলেন, “জহির উদ্দিন বেচুর কিছুটা মানসিক সমস্যা রয়েছে। চার সন্তানের জনক বেচুর খুঁটিনাটি দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কখনো বড় ধরনের কোনো চুরি করছে বলে কারও জানা নেই।”
এছাড়া ঘটনাস্থলের পাশে বেচুর বোন ও খালার বাড়ি এবং সে প্রায় বোনের বাড়িতে যাওয়া-আসা করে বলেও জানান ইউপি সদস্য মো. হানিফ।
এদিকে বেচুকে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যার তিনটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
মোবাইলে ধারণ করা তিনটি ভিডিওর মধ্যে একটিতে দেখা যায়, ভোর রাতের দিকে কয়েকজন জহির উদ্দিন বেচুকে মাটিতে ফেলে বেধড় পেটাচ্ছে। তাদের মধ্যে একজনকে বেচুর চোখ উপড়ে ফেলার কথা বলতে শোনা যায়। একজন বেচুর সঙ্গে আর কে ছিল- তার নাম না বললে তাকে জানে মেরে ফেলার কথা বলতে শোনা যায়।
অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়- সকালে বেচুকে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। গুরুতর জখম নিয়ে তিনি কাতরাচ্ছেন আর লোকজন তা দেখলেও কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।
অন্য ভিডিওটিতে তাকে সড়কে পড়ে কাতরাতে দেখা যায়।
ওসি মো. শাহিন মিয়া বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পরে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মা নাজিয়া খাতুন বাদী হয়ে রাতে থানায় হত্যা মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে।
এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানান ওসি।