মেয়র পদপ্রার্থী দেওয়ান আবুল বাশারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সদ্য সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম উল্টো তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ এনেছেন৷
Published : 23 Jun 2024, 08:37 PM
নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাতের বেলায় প্রতিপক্ষের অস্ত্রধারীদের আনাগোনায় ভোটাররা আতঙ্কিত বলে অভিযোগ করেছেন মেয়র পদপ্রার্থী দেওয়ান আবুল বাশার (বাদশা)৷
রোববার দুপুরে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে বাদশা নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
২৬ জুনের এই নির্বাচনে মেয়র পদে মোবাইল ফোন প্রতীকে বাদশা আর জগ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সদ্য সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম৷
নির্বাচনের শুরু থেকে এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা চলছে অভিযোগ করে দেওয়ান আবুল বাশার বলেন, “আমাদের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা (প্রতিদ্বন্দ্বী) বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসী ও অস্ত্র জোগাড় করে নির্বাচনি এলাকায় রাতের বেলায় মাইক্রোবাস দিয়ে মহড়া দিচ্ছে, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।”
ভোটাররা যেন ভোটকেন্দ্রে না যায় সেজন্য বিভিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় রাত ১টার পর থেকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে অভিযোগ করে মেয়র পদপ্রার্থী বলেন, “নির্বাচন কমিশনও যেন এইদিকে নজর দেয়। যত ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আছে তা যেন প্রতিহত করেন তারা। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা যেন তারা করেন৷’
ভোটের মাত্র দুইদিন আগে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আবুল বাশার বলেন, “সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যাপকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে এমন কিছু এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। তবে, আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছি, এসব বহিরাগত সন্ত্রাসীদের যেন এলাকাছাড়া করার ব্যবস্থা তারা করেন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। তারা বারবারই বলছে, ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু দেখছি না তেমন কিছু।”
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রফিকুল ইসলাম চারটা খুনের মামলার আসামি; এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, সন্ত্রাসী, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে উল্লেখ করে মোবাইল ফোন প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, “তাদের লোকজন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কয়েম করেছে। তারা রাতের বেলায় যেসব কালো গ্লাসের গাড়িগুলো ব্যবহার করেন, সেসব গাড়িতে পুলিশ তল্লাশি করলে অস্ত্র পাবে বলে আমার বিশ্বাস।”
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, থানা-পুলিশসহ সবাইকে লিখিতভাবে অবগত করলেও উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
“ভোটাররা ভয় পাচ্ছে। ধীরে ধীরে তারা ভীত হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের দিন হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে। আমি নিজেও কিছুটা আতঙ্কিত”, বলেন, দেওয়ান আবুল বাশার৷
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলাম রফিক। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এলাকায় মহড়া দিচ্ছে৷ হত্যা মামলার আসামিরাও প্রকাশ্যে মোবাইল প্রতীকের প্রচারে অংশ নিয়ে ভোটারদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে৷ আমি কমিশনে একটি তালিকা দিয়েছি৷ আশা করি, প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে৷
“আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তো মূল প্রার্থী না। মূলত স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কয়েকটি ব্যবসায়িক গ্রুপ আমার বিরুদ্ধে একজোট হয়ে তার পক্ষে কাজ করছে৷ এসব কারণে তারা আমাকে দমাতে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বেড়াচ্ছে।”
দুই মেয়র পদপ্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি৷
তবে, শনিবার নির্বাচনি পরিবেশ সম্পর্কে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে আমরা অভিযোগ পেয়েছি৷ এ ব্যাপারে থানা-পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে৷ নির্বাচনি পরিবেশ সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর রাখতে স্থানীয় প্রশাসনসহ নির্বাচন কমিশন তৎপর রয়েছে৷”
২৬ জুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে কাঞ্চন পৌরসভার ১৯টি ভোটকেন্দ্রে ৪০ হাজার ৭৯৮ ভোটার ভোট দেবেন৷
এ নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থী, ২৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও চারজন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।