২০২১ সালের জানুয়ারিতে পুরনো শহীদ মিনারটি ভাঙা হয়। ওই সময় মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল মাঠে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে দেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর।
Published : 21 Feb 2025, 02:19 AM
তিন বছর পর একুশের আনুষ্ঠানিকতা ফিরল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
বৃহস্পতিবার রাত ১২ টা ১ মিনিটে নগরীর কে সি দে রোডে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন৷
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের নবনির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে এবার একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের ঘোষণা দেন মেয়র।
নির্মাণ কাজ শেষ হলেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটির নকশা নিয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বরে আপত্তি জানায় চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
এরপর একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয় সে সময়ের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে। ওই কমিটি নকশা সংশোধনে ১০টি সুপারিশ করলেও সেগুলো বাস্তবায়নে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এর মধ্যে গত ১৬ ডিসেম্বরে বিজয় দিবসে উত্তর কাট্টলীর অস্থায়ী স্মৃতি সৌধ ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, কে সি দে রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলের অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সেদিন মুক্তিযোদ্ধা, কবি, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সংশ্লিষ্টরা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানান।
নগরীর কেসি দে রোডে পাহাড়ের পাদদেশে প্রথম শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয় ১৯৬২ সালে। পরে ১৯৭৪ সালে সেটিকে নতুন রূপ দেওয়া হয়।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের অধীনে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের ব্যয় শুরুতে ধরা হয় ২৩২ কোটি টাকা। পরে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে হয় ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এই প্রকল্পের আওতায় পাবলিক লাইব্রেরি ও মুসলিম ইনস্টিটিউট হল অংশের সঙ্গে সড়কের বিপরীত পাশের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অংশকে একটি প্লাজা দিয়ে যুক্ত করার নকশা করা হয়।
ওই নকশা অনুসারে সড়কের উপর দিয়ে প্লাজা নির্মাণের জন্য আগের শহীদ মিনারটি ভেঙে ভিত্তি উঁচু করে একই আদলে নতুন শহীদ মিনার নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে সে সময়ের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের উপস্থিতিতে সাংস্কৃতিক কর্মীদের সঙ্গে সভা করে পুরনো শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১ সালের জানুয়ারিতে পুরনো শহীদ মিনার ভাঙা শুরু হয় এবং মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল মাঠে অস্থায়ী আরেকটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তর।
এরপর অদূরে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলের মাঠে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে জাতীয় দিবসগুলোতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হত।
তারপর ২০২৪ সালের ২৩ মার্চ নগরীর এক প্রান্তে উত্তর কাট্টলীতে সাগর তীরে অস্থায়ী স্মৃতি সৌধের উদ্বোধন করা হয়। সেদিন জানানো হয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে একই স্থানে একটি স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করবে। সেটিরও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
গত বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল মাঠের অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। আর উত্তর কাট্টলীতে অস্থায়ী স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।